বৃহস্পতিবার, ৩০ আগস্ট, ২০১২

গাব খেতে চায় কাক

আসলে নির্বাচন এক অনিঃশেষ প্রক্রিয়া। এক নির্বাচন শেষ হওয়ার সঙ্গে-সঙ্গে শুরু হয় পরবর্তী নির্বাচনের প্রস্তুতি। কৌশলের পর কৌশল নির্ধারণ। টারগেটের পর টারগেট ঠিকঠাক। আয়োজন। যোগাড়যন্ত্র। এ সবের এক পর্যায় শেষ হয়েছে গত সাড়ে তিন বছরে। এখন শুরু হয়েছে দ্বিতীয় পর্যায়ের মহড়া। সামনেই ফাইনাল খেলা। আর গাব খেতে চায় একাধিক কাক। তবে এর মধ্যেই এক কাকের গলায় ঠেকেছে গাবের বিচি। খেতে মজা, কিন্তু গলা দিয়ে গলছে না ঠিকমতো। তাই কাক বলছে, গাব খাবো না - গাব খাবো না! অন্য কাক ভাবছে খাওয়ার মজাটাই আসল। তাই বলছে, গাব খাবো না খাবো কি? গাবের মতো আছে কি? প্রিয় পাঠক, আপনারা ঠিকই অনুমান করেছেন ... আমাদের নির্বাচনী কাকের গলায় ঠেকেছে তদারক সরকার নামের বিচি। এক দলের আশঙ্কা নির্বাচনে চিৎপটাং হওয়ার। অন্য দলের আশা সোনার হরিণ ফিরে পাওয়ার। দুই দলই ক্ষমতা চায়, ক্ষমতায় স্থায়ী হতে চায়। মরীচিকার সামনে মরুতৃষ্ণায় কাতর তারা। জানে না কি ফল এনে দেবে নির্বাচন, তবুও আশঙ্কা ও সম্ভাবনায় দুলছে দু’টি দল। কারণ একটাই। উভয়েই জানেন সোভিয়েত নেতা জোসেফ স্তালিন (১৮৭৮-১৯৫৩)-এর সেই বিখ্যাত উক্তিটি - “The people who cast the votes don't decide an election, the people who count the votes do.” অর্থাৎ নির্বাচন কমিশন এবং তাদের সহায়তাকারীরাই আসল ক্ষমতার উৎস! তদারক সরকারের মাধ্যমে ওই উৎস নিয়ন্ত্রণ করা যায় - এমন ধারণা থেকে চলছে দুই দলে চরম টানাপড়েন। কষাকষি। আমাদের টাঙ্গাইলের ভাষায় বলি ‘কষ্টাকষ্টি’!
    এ অবস্থায় এখন চলছে নির্বাচনী প্রক্রিয়ার দ্বিতীয় পরিস্থিতি। আওয়ামী লীগ বলছে, অতীতে তদারক সরকারের অভিজ্ঞতা ভাল নয়। কাজেই ওটা বাদ। নির্বাচন হবে দলীয় সরকারের অধীনে। বিএনপি বলছে, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের অভিজ্ঞতা তিক্ত। তাই নির্বাচন হতে হবে তদারক সরকারের অধীনে। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, কেউ ছাড় দিতে রাজি নয় কাউকে। আওয়ামী লীগের আশঙ্কা, নির্বাচনে হেরে গেলে তাদের শিকার হতে হবে ভয়াবহ প্রতিহিংসার রাজনীতির। বিএনপি’র আশঙ্কা, যে ভয়ানক প্রতিহিংসার রাজনীতির শিকার তারা... তাতে নির্বাচনে না জিতলে নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে হবে তাদের। এ অবস্থায় তদারক সরকার ব্যবস্থা ছাড়া নির্বাচনে যাবে না বিএনপি। তখন খালি মাঠে গোল দেয়ার মতো পরিস্থিতিতে পড়তে হবে আওয়ামী লীগকে। অমন পরিস্থিতি অভিপ্রেত নয় তার। তাই দরকার একটি মর্যাদাসম্পন্ন বিরোধী দলের - যা বিকল্প হতে পারে বিএনপি’র। আওয়ামী লীগের পছন্দ এখানে জাতীয় পার্টি। আশা করা হচ্ছে এই পার্টিই হবে “হার ম্যাজেস্টি’স লয়্যাল অপোজিশন”। এ জন্যই নানা ভাবে চুনকাম করে, সাজিয়ে গুছিয়ে তৈরি করা হচ্ছে তাকে। তাদের সাম্প্রতিক দিল্লি পলিশ-ও ওই মর্যাদায় এক মেক-আপ, একই সঙ্গে গেট-আপ।
    তবে হিসাবে গড়বড় হতে কতক্ষণ! গত সাড়ে তিন বছরের স্থানীয় নির্বাচনের হাল হকিকত দেখলে সবচেয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত সঙ্গী জুটে যাওয়ার আশঙ্কাই জাগে। ময়দানে বিএনপি না থাকলে দৌড়ে জাতীয় পার্টিকে ছাড়িয়ে যেতে পারে জামায়াত ইসলামী-ই। সেই খরগোশ ও কুকুরের গল্প মনে থাকতে পারে সবার। খাবারের জন্য দৌড় আর প্রাণ বাঁচাতে ছুট এক হয় না কখনও। তেমনই ঘটতে পারে ওই নির্বাচনী দৌড়ে। আর এমনিতে নির্বাচন আর কি? মারকিন সমালোচক এইচ এল মেনকেন (১৮৮০-১৯৫৬) যে লিখেছেন “Every election is a sort of advance auction sale of stolen goods” - তা তো মিথ্যা নয় একেবারে?

sazzadqadir@gmail.com

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন