বৃহস্পতিবার, ১৬ মে, ২০১৩

হরতালের মান গেল!




আজ কোনও মত-মন্তব্য নয়, একটি খবর পরিবেশন করছি এ কলামে। খবরটি আমাদের দেশের নয়, পূর্ব আফ্রিকার দেশ কেনিয়া’র। বৃটেনের কাছ থেকে ১৯৬৩ সালে স্বাধীনতা পাওয়া এ দেশটির আয়তন পাঁচ লাখ ৮১ হাজার ৩০৯ কিলোমিটার, লোকসংখ্যা চার কোটি ৩৫ লাখ, মাথাপিছু গড় বার্ষিক আয় ১৮০২ ডলার (বিবিসি’র হিসাবে ১৭০০ ডলার)। এ আয় আমাদের  মাথাপিছু গড় বার্ষিক আয়ের প্রায় তিন গুণ। আমাদের আয় মাত্র ৬৪০ ডলার।
আমাদের সংসদ সদস্যরা কত বেতন-ভাতা পান জানি না, তবে কেনিয়া’র সংসদ সদস্যরা স্থান পেয়েছেন বিশ্বের সর্বাধিক বেতন-ভাতাপ্রাপ্ত সংসদ সদস্যদের তালিকায়। এ নিয়ে ওই দেশের লোকজন সমালোচনায় মুখর হয় প্রায়ই। সেখানকার বেতন ও সম্মানী কমিশন তাদের বেতন-ভাতা নির্ধারণ করে দিয়েছে মাসিক প্রায় ৬৩০০ ডলার। কিন্তু রাজি নন তারা। সব সংসদ সদস্য মিলে দাবি করেছেন তাদের মাসিক বেতন-ভাতা দিতে হবে প্রায় ১০ হাজার ডলার।
কেনিয়ায় প্রেসিডেন্ট ও সংসদ নির্বাচন হয়েছে মাস দুই আগে গত মার্চে। নতুন প্রেসিডেন্ট উহুরু কেনিয়াততা জানিয়ে দিয়েছেন, সংসদ সদস্যদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধির দাবির সঙ্গে একমত নন তিনি।
কেনিয়া’র সংসদ সদস্য সংখ্যা ৪১৬। এদের ৩৪৯ জন জাতীয় সংসদের এবং ৬৭ জন সিনেটের সদস্য। তারা বলেছেন, দাবি না মানলে বেতন ও সম্মানী কমিশন ভেঙে দেয়ার উদ্যোগ নিতে দ্বিধা করবেন না একটুও। ১০ হাজার ডলার বেতন তাদের প্রাপ্য, কারণ দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে কঠোর পরিশ্রম করতে হয় তাদের। নির্বাচনী এলাকায় খরচপাতি করতে হয় অনেক, কখনও-কখনও স্কুলের ফি পর্যন্ত দিতে হয় নিজেদের পকেট থেকে।
এই নির্বাচনের আগে, পূর্ববর্তী সংসদে নিজেদের অবসরকালীন বোনাস হিসেবে এক লাখ সাত হাজার ডলার বরাদ্দ পাশ করিয়ে নিয়েছেন তারা। ওই বরাদ্দের মধ্যে আরও আছে সশস্ত্র রক্ষী, কূটনৈতিক পাসপোর্ট ও বিমানবন্দরে ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহারের সুবিধা।
গত মঙ্গলবার প্রেসিডেন্টের আপত্তির খবর প্রচারিত হওয়ার পর-পর ‘সংসদ অবরোধ’ নামের এক সংগঠনের লোকজন রাজধানী নাইরোবি’র রাজপথে মিছিল করে সমবেত হয় সংসদ ভবনের সামনে। সংসদ সদস্যদের ভবনে ঢুকতে বাধা দেয় তারা। বলে, ১০ হাজার ডলার বেতন-ভাতা প্রত্যাখ্যান করে একটি ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করলেই শুধু ভেতরে যেতে দেয়া হবে তাদের। বিবিসি সংবাদদাতা অ্যান মাওয়াথে একজন সংসদ সদস্যকে স্বাক্ষর করতে দেখেছেন, তবে তিনি কিছু বুঝেশুনে স্বাক্ষর করেছেন বলে মনে হয় নি তার।
প্রতিবাদকারীরা একটি ট্রাকে করে ১৩-১৪টি ছানা সহ একটি ধাড়ী মাদী শূকরী নিয়ে আসে সেখানে। ওদের গায়ে স্লোগান লেখা ‘লোভী সংসদ সদস্য, আমাদের রক্ত খা’। সত্যি-সত্যি একজন প্রতিবাদকারী ব্যাগে করে আনা রক্ত ছড়িয়ে দেয় সেখানে। ‘সংসদ অবরোধ’ মিছিলের সংগঠক বনিফেস মোয়ঙ্গি উপস্থিত সাংবাদিকদের কাছে বলেছেন, আমরা শূকরের রক্ত ছড়িয়ে দিয়ে এটাই বোঝাতে চেয়েছি যে আমাদের সংসদ সদস্যরা শূকরদের মতো পেটুক ও লোভী।
প্রতিবাদকারীরা এসেছিলেন নাইরোবি’র ফ্রিডম করনার খেকে মিছিল করে। দাঙ্গা পুলিশ বেশিক্ষণ কর্মসূচি চালাতে দেয় নি তাদের। লাঠিচার্জ করে ও কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে সমবেত জনতাকে ছত্রভঙ্গ করে দেয় তারা। বনিফেস মোয়াঙ্গি ও অন্যান্য সংগঠককে গ্রেফতার করে একই সঙ্গে।
সংবাদদাতা জানিয়েছেন, কাঁদানে গ্যাস নিরস্ত করতে পারে নি শূকরগুলোকে। ওরা রক্ত চেটেই যাচ্ছিল আপন মনে।
এ খবর প্রসঙ্গে কোনও মন্তব্য না করার কথা বলেছি আগেই, তবে এর পরিবেশনের উদ্দেশ্যটা বলি। সেটা হচ্ছে প্রতিবাদ জানানোর বিভিন্ন পদ্ধতির প্রতি সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা। আমরা যে হরতাল, ঘেরাও, মানব বন্ধন, মিছিল ইত্যাদি হাতে গোনা ক’টি কর্মসূচি প্রয়োগ করতে দেখি এগুলোর ধার কমে গেছে বহু আগেই, এখন কোন কার্যকরিতা নেই বললেও চলে। ১৪ দলীয় জোটের বিরুদ্ধে এ সব পদ্ধতি পুনঃ-পুনঃ প্রয়োগ করেও কোন ফল পায় না তাই। এছাড়া এ সব কর্মসূচি করে-করে ওরা এমন অভ্যস্ত যে এগুলো আর গায়ে-পায়ে লাগে না তাদের। আর হরতালের ধার? মান-সম্মানই তো যেতে বসেছে এখন। দেশের কোথায় কি ঘটছে - প্রাকৃতিক দুর্যোগে না মনুষ্যসৃষ্ট বিপর্যয়ে মানুষ বিপন্ন হয়ে পড়ছে - তা দেশ-বিদেশের মানুষ জেনে ফেললেও, যাদের বেশি করে জানার কথা তারা একটুও না জেনে ডেকে বসছেন হরতাল। আবার ঢোঁক গিলতে-গিলতে তা প্রত্যাহারও করছেন বাধ্য হয়ে। তবে যারা আবার বেশি জানেন তারাও যা বলছেন! সাভার ট্র্যাজেডি’র পর মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে আসার জন্য কিছু লোকের রানা প্লাজা’য় যাওয়া থেকে ‘ঝাঁকিকম্প’ পর্যন্ত উদাহরণ মিলবে অনেক। সে সব টানতে চাই না এখানে। শুধু বলছি, মিডিয়া ও সরকারের প্রতি আস্থার অভাব কত প্রকট হয়ে উঠেছে এখন যে রেশমা উদ্ধারের ঘটনা নিয়ে প্রতিদিনই ছড়িয়ে পড়ছে নানা প্রশ্ন।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন