শনিবার, ১০ নভেম্বর, ২০১২

ওবামা আবার

বারাক ওবামা’র পুনঃনির্বাচন সম্পর্কে আমার আশপাশের কারও সন্দেহ ছিল না একটুও। মারকিন প্রেসিডেন্টরা দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য প্রার্থী হয়ে হারেন নি কখনও - এমনই বিশ্বাস অনেকের। ওয়াশিংটন, জেফারসন, মেডিসন, মনরো, জ্যাকসন, লিঙ্কন, গ্র্যান্ট, ক্লিভল্যান্ড, ম্যাককিনলি, উইলসন, ফ্রাঙ্কলিন রুজভেল্ট, আইজেনহাওয়ার, নিকসন, রিগান, ক্লিনটন ও জর্জ ডবলিউ বুশ নির্বাচিত হয়েছেন দু’বার। থিওডোর রুজভেল্ট, কুলিজ ট্রুম্যান ও লিনডন জনসন প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন প্রেসিডেন্টের মৃত্যুতে, পরে নির্বাচিত হয়েছেন আরেক মেয়াদের জন্য। তাঁদেরও তাই বলা যায় পুনঃনির্বাচিত। তবে দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিতও হয়েছেন অনেক প্রেসিডেন্ট। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন জন এডামস, জন কিউ এডামস, ভ্যান বুরেন, বি. হ্যারিসন, টাফট, থিওডোর রুজভেল্ট, হুভার, কারটার ও জর্জ এইচ ডবলিউ বুশ। কাজেই ওবামা’র ব্যাপারে সন্দিহানও ছিলেন অনেকে। সে সব সন্দেহের কথাও শুনছিলাম কিছু-কিছু।
পেনসিলভ্যানিয়া’র ওয়েস্ট চেসটার-এর বাসিন্দা আমার এক আত্মীয়াকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, কে জিতবে নির্বাচনে? ওবামা না রমনি? সে উত্তর দেয় সঙ্গে-সঙ্গে, রমনি। পরে দেখলাম পেনসিলভ্যানিয়া’য় জিতেছেন ওবামা-ই। আমার ওই আত্মীয়া এবং এমন আরও অনেকে রমনি’র কথা বলেছেন নানা কারণে। আবার অনেকে সরাসরি উত্তর না দিয়ে বলেছেন, দু’জনের মধ্যে তফাৎ কি? একই তো। কেউ-কেউ বলেছেন, তফাৎ আছে। বিশেষ করে আমাদের জন্য। হিলারি ক্লিনটনের সূত্রে ওবামা প্রশাসনের সঙ্গে সুসম্পর্ক রয়েছে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের। এই সুসম্পর্ককে বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক ফ্যাক্টর মনে করেন কেউ-কেউ।
আসলে যার-যার অবস্থান থেকে এমন হিসাব-নিকাশ চলে নির্বাচনে। বাংলাদেশে ইউনূস ফ্যাক্টর, আর ইসরাইলে ফ্যাক্টর স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু। নির্বাচনী প্রচারাভিযানকালে সকল সৌজন্য শালীনতা ও জাতীয় কৃতজ্ঞতা ভুলে তিনি রমনি’র বন্ধু হিসেবে ওবামা’র বিরুদ্ধে যে বিষোদ্গার করেছেন তার জন্য এখন ইসরাইলের শীর্ষ দৈনিক হারেৎজ-কে শিরোনাম করতে হয়েছে - “আমরা দুঃখিত, প্রেসিডেন্ট ওবামা, ক্ষমা করুন প্রধানমন্ত্রীকে!”
এবার অনেক ইস্যু-বিতর্ক দাঁড়িয়ে গিয়েছিল ওবামা’র নির্বাচন ঘিরে। তাহলেও তিনি এত ভোটে জয়ী হলেন কিভাবে?
প্রথমত, অভিবাসীরা খুশি ছিলেন না তাঁর ওপর - তিনি তেমন কিছু করেন নি বলে। কিন্তু যেটুকু যা করেছেন তা-ও নস্যাৎ করে দিতে পারেন রমনি - এ আশঙ্কা ছিল তাঁদের। দ্বিতীয়ত, ‘মেডিকেয়ার’ নামে পরিচিত ওবামা’র  স্বাস্থ্য পরিচর্যা ব্যবস্থার সংস্কারকে ‘ওবামাকেয়ার’ বলে ঠাট্টা করেছেন রমনি। কিন্তু এ মশকরা ভাল চেখে দেখেন নি সুবিধাভোগী নিম্নবিত্ত ও প্রবীণ নাগরিকেরা। তৃতীয়ত, গর্ভপাত করা যাবে না - ধর্ষণের শিকার হলেও - রমনি শিবিরের এমন কট্টর অবস্থানে অসন্তুষ্ট হয়েছেন নারী ভোটাররা। যে নারীরা গর্ভপাতবিরোধী ছিলেন তাঁরাও আতঙ্কিত হয়েছেন এত দিনের একটা স্বাধিকার হারানো বা নিয়ন্ত্রিত হওয়ার আশঙ্কায়। চতুর্থত, তেমন সফল না হলেও বিদেশে নতুন-নতুন বন্ধু সৃষ্টির চেষ্টা করেছেন ওবামা - এটা প্রশংসা পেয়েছে অনেকের। তাঁর ইরাক ও আফগান যুদ্ধে ইতি ঘটানোর উদ্যোগও পেয়েছে বিশেষ সমর্থন। বহু ভোটার মনে করেন, বিশ্বপরিস্থিতি নিরাপদ না হলেও আগের চেয়ে যে উন্নত হয়েছে  তা-ই বা মন্দ কি! এছাড়া গুয়ানতানামো বন্দিশিবির বন্ধ করতে না পারা, লিবিয়া সঙ্কট, বেনগাজিতে রাষ্ট্রদূত হত্যা  ইত্যাদি বিষয়গুলো সেভাবে উঠে আসে নি সামনে। ভোটারদের বেশির ভাগ ভেবেছেন, নতুন কোনও মর্যাদা বা মহিমায় দেশকে উন্নীত না করতে না পারলেও দেশকে কোথাও অবনতও করান নি ওবামা। পঞ্চমত, কিছু ব্যতিক্রম বাদে, বলতে গেলে, মিডিয়া’র প্রাণঢালা সমর্থন পেয়েছেন ওবামা। তাঁর অনেক ভুলচুক দেখেও দেখে নি তারা। ষষ্ঠত, রমনি’র সমস্যা - তিনি মরমন সম্প্রদায়ের মানুষ। এ সম্প্রদায়কে খৃস্টান মনে করে না খৃস্টানরা। অন্যদিকে ওবামাকে তারা মনে করে ঘাপটি মারা মুসলমান। তাহলেও কথায় ও কাজে ওবামা সবসময়েই তুলে ধরেছেন খৃস্টিয় সংস্কার ও মূল্যবোধ। ভোটাররা ভেবেছেন, এ-ও মন্দের ভাল।
আরও অনেক ফ্যাক্টর নিয়ে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করা যায়, কিন্তু ওবামা’র বিজয় কাছে বা দূরে থেকে এত স্পষ্ট দেখা গেছে যে, এ নিয়ে কার্যকারণ খুঁজে বেড়ানোটাই অকারণ মনে হয়।

facebook.com/sazpa85

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন