শনিবার, ২৬ জানুয়ারী, ২০১৩

বই ও বইয়ের মেলা

সাযযাদ কাদির: ভাষা শহিদদের স্মৃতিবাহী ফেব্রুয়ারি আসন্ন। আর ক’দিন পরেই রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার থেকে শিল্পকলা একাডেমী পর্যন্ত গোটা রমনা এলাকা মুখরিত হবে সাহিত্য-সংস্কৃতির নানা অনুষ্ঠান-আয়োজনে। কবিতা উৎসব, নাট্য অনুষ্ঠান, শিল্প প্রদর্শনী, সংগীতের আসর, গ্রন্থমেলাসহ বহু বিচিত্র বর্ণাঢ্য প্রাণচাঞ্চল্য দেখা যাবে এ ঐতিহ্যিক বলয়ে। এমন আয়োজন অবশ্য হবে সারা দেশেই। শহরে, পাড়ায়, গ্রামে। তবুও ওই সংস্কৃতি বলয়ের আয়োজন যেন সব কিছুকে ছাড়িয়ে। এখানে দেশের এ প্রান্ত ও প্রান্ত থেকে আসেন শিল্পী-সাহিত্যিক সকলে। প্রবাসী লেখকরাও আসেন এই সময়টায়। নানা দেশ থেকে গুণীজনেরা আসেন বিভিন্ন আয়োজন-অনুষ্ঠানে। নবীন প্রবীণ সকলের এক মিলনমেলা হয়ে ওঠে গোটা ফেব্রুয়ারি মাস। আর সব আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু বাংলা একাডেমীর ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’। এ মেলাতেই আসে বছরের সব নতুন বই, আর বলতে গেলে সারা বছরের বই বিক্রিও এই সময়টায়। কাজেই লেখক, প্রকাশক ও পাঠকদের এ মেলায় নতুনত্বই প্রধান। এখানে আত্মপ্রকাশ করেন নতুন লেখক, চমক জাগান নতুন প্রকাশক। নতুন সৃষ্টি হয়েছে পড়ার নেশা- ভিড় করেন সেই পাঠকরাও।
‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’ পাড়ি দিয়ে এসেছে দীর্ঘ পথ। এ পথে অনেক পরিবর্তন ঘটেছে, সংযোজন-বিয়োজন হয়েছে- কিন্তু এর আকর্ষণ আছে তেমনই। এবারও উদ্যোগ আছে নতুন কিছুর। শুনেছি সে সব উদ্যোগ মেলাকে প্রকৃত প্রকাশকদের মেলায় পরিণত করার। বিভিন্ন সংগঠন, সমিতি, সংস্থাকে স্টল বরাদ্দ দেয়া হবে না এবার। এ ধরনের উদ্যোগ অতীতেও নেয়া হয়েছে বহুবার। কিন্তু মহলবিশেষের চাপে ফলপ্রসূ হয় নি সে সব উদ্যোগ। এবারও চাপ আছে, তবে মহাপরিচালক তা দৃঢ়তার সঙ্গে মোকাবিলা করছেন বলে জেনেছি। এজন্য তিনি সাধুবাদ ও সমর্থন পাচ্ছেন সংশ্লিষ্ট সকল মহলের- এমন খবরও পেয়েছি। এ ক্ষেত্রে আমরাও আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি তাঁকে।
গ্রন্থমেলা’র বড় সমস্যা প্রচণ্ড ভিড়। এদিকে শাহবাগ, ওদিকে শিক্ষাভবনের কাছ থেকে ধরতে হয় দীর্ঘ লাইন। ভেতরেও ঠেলাঠেলি ভিড়। এবার মেলাকে একাডেমীর ভেতরেই রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জেনেছি- তাতে আশঙ্কা করছি ভিড় আরও প্রচণ্ড হয়ে উঠতে পারে। বইয়ের পাঠক-ক্রেতারা বই কেনেন নেড়ে চেড়ে দেখে, কিন্তু সে সুযোগটা থাকে না ঠেলাঠেলিতে। এতে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়েরই হতাশ হওয়ার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। এই হৈহৈ ভিড়ের কারণে নজরুল মঞ্চে বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে অনেক জ্ঞানী-গুণী এলেও তাঁদের একটি কথাও শোনা যায় না। এ অবস্থায় মেলার পরিসর বৃদ্ধির বিষয়টি নিয়ে ভাবতে পারেন একাডেমী কর্তৃপক্ষ। আলোচনা অনুষ্ঠানের চত্বরটিতে স্টল বরাদ্দের প্রস্তাব করেছেন কোনও-কোনও প্রকাশক। এ প্রস্তাবটি ভেবে দেখা যেতে পারে বলে মনে করি আমরা। কারণ আলোচনা-সেমিনারের আয়োজন ভবনের অডিটোরিয়ামে করা হলে তা হবে কোলাহলমুক্ত, বক্তা ও দর্শক-শ্রোতাদের জন্য সুখকর।
তবে বইয়ের দাম দিনে-দিনে বেড়ে যে পর্যায়ে পৌঁছেছে তা বলতে গেলে সাধারণ ক্রেতাদের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে এখন। প্রকাশকেরা বলেন, মুদ্রণ সামগ্রী-সরঞ্জামে সরকার যদি কর হ্রাস না করে তবে দাম এমন চড়তেই থাকবে। এছাড়া অডিও-ভিসুয়াল মিডিয়ার ক্রমবিস্তৃতি বইয়ের জগৎকে ফেলেছে চাহিদার সঙ্কটে। আগের মতো আর পাঠক-ক্রেতা নেই বইয়ের। এ অবস্থায় প্রকাশনার বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা হয়ে উঠেছে অপরিহার্য। আমাদের মনে রাখা দরকার বই মানুষের নিত্যসঙ্গী। এ সঙ্গী আমাদের জীবনের বিকাশে রাখে অন্যতম প্রধান উৎস-ভূমিকা। বই সম্পর্কে কোথাও পড়েছিলাম-
“Books are a man’s soulmate. What would we do without books? Books and readers are inseparable from each other. Right from childhood, a person is taught to value books. He carries books in his bag to school, takes care of them by covering them and attaching a label with his name and feels a sense of pride in being its owner. Books lend a person with a feeling of self-importance as well. Books help us to stretch the frontiers of our knowledge. The more a man reads, the more learned and knowledgeable he becomes.”  এ কথাগুলির গুরুত্ব অনুধাবন করা উচিত সকলেরই।
sazzadqadir@rediffmail.com

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন