শনিবার, ২ মার্চ, ২০১৩

কথার কথা যেন না হয়

দেশ হাঁটছে সরু সুতোর উপর দিয়ে, ক্রমাগত চাপ বাড়ছে ভারসাম্য বজায় রাখার ওপর। কোন কথা, কোন কাজ কখন কি উত্তেজনা অস্থিরতা ছড়িয়ে দেয় - সে আশঙ্কা নিয়ে চলতে হচ্ছে নাজুক পরিস্থিতির ভেতর দিয়ে। তারপরও যেখানে যত বাঁধন সব যেন আলগা হয়ে পড়ছে, খসে-খসে পড়ছে, ছিঁড়ে-ছিঁড়ে যাচ্ছে এলোমেলো হয়ে। বুদ্ধি-বিবেচনাও ব্যর্থ, বিকল হচ্ছে পদে-পদে। ধৈর্য হারিয়ে ফেলছি আমরা, সহিষ্ণুতা দেখাতে পারছি না সমস্যা-সঙ্কট মোকাবেলা করতে গিয়ে। কথায়-কথায় চরমে উঠছে সামাজিক আস্থা। উগ্রতা ছড়িয়ে পড়ছে জনমানসে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে পড়ছে এর প্রভাব, প্রতিক্রিয়া দেখা দিচ্ছে প্রায় সঙ্গে-সঙ্গে। এ জন্যই হঠাৎ করেই সেদিন ভেঙে গেছে এত গর্ব ও অহঙ্কারের সাংবাদিক ঐক্য। প্রকাশ্যেই ঘোষণা করা হয়েছে সে ভিন্নতা। ফলে নগ্ন হয়ে পড়েছে ভেতরকার দূরত্ব, বিরোধ, বিবাদ। খুলে গেছে তালি দেয়া জোড়া। অথচ কিছুদিন আগে সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনির হত্যাকাণ্ডের পর শপথ ঘোষণা করা হয়েছিল ঐক্যের। সে ঘোষণা হয়েছিল দৃঢ়তার সঙ্গে। সর্বজনশ্রদ্ধেয় বয়োজ্যেষ্ঠ সাংবাদিকরা অনুরোধ জানিয়েছিলেন- যে কোন মূল্যে এ ঐক্য অটুট রাখতে। কিন্তু তা অটুট থাকেনি শেষ পর্যন্ত, পরিস্থিতির সামনে টুটে গেছে সকল প্রতিশ্রুতি, শপথ, অঙ্গীকার। এর পর-পরই সাগর-রুনি হত্যার বিচার দাবির আন্দোলন মুখোমুখি হয় নতুন পরিস্থিতির। বলা যায় একেবারে অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতির। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর সাংবাদিক নেতাদের সামনে কথা প্রসঙ্গে মন্তব্য করে বসেন সাগর-রুনির ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে। ইঙ্গিত করেন তাদের অনৈতিক জীবন যাপনের দিকে। বিষয়টি প্রথমে সাংবাদিকদের বিমূঢ় করে তুললেও প্রতিবাদ জানাতে দেরি হয় না তাদের। এরপর সৃষ্টি হয় এক অপ্রীতিকর পরিস্থিতির। উচ্চকণ্ঠ ক্ষোভ প্রকাশ পায় সাংবাদিক নেতাদের প্রতিবাদে। আশঙ্কা জাগে, বিষয়টির শেষ এখানেই নয়। আরও অপ্রীতিকর কিছু হয়তো অপেক্ষা করছে সামনে। আসলে কোথায় এসে দাঁড়িয়েছি আমরা? মহাকবির অমর পঙ্‌ক্তি উদ্ধৃত করে বলা যায়, ‘একে একে নিভিছে ঢেউটি’। আসলেই আলো সরে যাচ্ছে চারদিক থেকে। নেমে আসছে অন্ধকার। গভীর গভীরতর হয়ে পড়ছে ছায়া। বিভাজনের প্রবল ধাক্কা ছুটে এসে আছড়ে পড়েছে পেশাজীবী কর্মজীবী সংগঠনগুলোর ওপর। ফলে ভাঙছে সব কিছু, খণ্ড-খণ্ড হচ্ছে, বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে। আর হয়ে পড়ছে দুর্বল, অশক্ত, ভঙ্গুর। হারাচ্ছে জোর প্রতিবাদ-প্রতিরোধের ক্ষমতা। দর কষাকষির দৃঢ়তা। এতে লাভ হচ্ছে প্রতিপক্ষের। তারা শক্তিমান হচ্ছে আরও। সুযোগ নিচ্ছে পদে-পদে। আগে ছিল ন্যূনতম শর্তে ঐক্য গড়ে তোলার বা ঐক্যবদ্ধ থাকার একটা বিষয়। সেটা-ও শেষ পর্যন্ত থাকেনি বেশির ভাগ ক্ষেত্রে। নেতৃত্বের লড়াই, গ্রুপিং, ক্ষমতার ইঁদুরদৌড় মানে না কোন শর্ত। তখন কেবল কে আগে যায় কখন- সেদিকেই থাকে দৃষ্টি। ব্যতিক্রমও আছে। নীতিনৈতিকতা, আদর্শ, লক্ষ্য প্রভৃতির জন্যও অনেক সময় চ্যালেঞ্জ করতে হয় ঐক্যকে। সেক্ষেত্রে দেখতে হবে তা যেন কথার কথা না হয়। তা যেন সত্যিই হয় স্ব-স্ব নীতি-আদর্শের আপসহীন অবস্থান। তখন কোন ভিন্নমত বা আপত্তি থাকবে না কারও।
sazzadqadir@gmail.com

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন