বুধবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩

সাঁকোতে সাবধান

প্রধানমন্ত্রী ক্ষুব্ধ হয়েছেন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও জোটের নেতাদের অতিকথনে। তাদের নির্দেশ দিয়েছেন মিডিয়া ও দলীয় নেতাদের সামনে সংযত হয়ে বক্তব্য দিতে। বলেছেন, সরকারের নীতিনির্ধারকদের অতিকথা অনেক সময় বিব্রতকর অবস্থায় ফেলতে পারে সরকারকে। তাই যে কোন বিষয়ে কথা বলতে হবে সতর্কতার সঙ্গে। পরিস্থিতি ঘোলাটে করতে পারে এমন উস্কানিমূলক কথাবার্তা থেকে বিরত থাকতে হবে তাই। ২৫শে ফেব্রুয়ারি সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে তিনি আরও বলেছেন, আমাদের পক্ষে আগ বাড়িয়ে কিছু করা বা বলা ঠিক হবে না। আপনাদের আগ বাড়ানো বক্তব্যকে কাজে লাগাচ্ছে প্রতিপক্ষরা। দয়া করে ওই ধরনের বক্তব্য দিয়ে সাহায্য করবেন না উস্কানিতে।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে তাঁর সজাগ দৃষ্টি, রাজনৈতিক মনোভাব ও সরকারি অবস্থান স্পষ্ট। তিনি চাইছেন উদ্ভূত অবস্থার শান্তিপূর্ণ সমাধান অর্থাৎ পরিস্থিতি যেন ঘোলাটে না হয়ে ওঠে, সরকারকে যেন বিব্রত না হতে হয়। শাহবাগ চত্বরের তরুণ-যুব সমাজের মৌলবাদমুক্ত অসামপ্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তোলার জাগরণ-আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানিয়েছে সরকার, সংসদ, মন্ত্রী, এমপি, সচিব, বেশির ভাগ বিরোধী দল ও পেশাজীবী সংগঠনসহ সবাই। আন্দোলনের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণের দিকে যথোচিত উদ্যোগ-কার্যক্রমও নিয়েছে সরকার। এর মধ্যে ঢুকে পড়ে একটি নৃশংস হত্যাকাণ্ড এবং একটি অকথ্য ব্লগ। দ্রুত পালটে যেতে থাকে পরিস্থিতি। তারপর ইস্যু হয়ে ওঠে ধর্মীয় রাজনীতি নিষিদ্ধকরণ বনাম নাস্তিক্যবাদ। তারপর মহানবীর অবমাননা বনাম জাতীয় পতাকা ও শহীদ মিনারের অবমাননা। দুই পক্ষ মুখোমুখি অবস্থানে এখন। এ অবস্থান মরিয়া। ঘৃণা-বিদ্বেষ-আক্রোশ-আক্রমণ এখন স্থান করে নিয়েছে মুখের ভাষায়। সমবেত হামলায়। স্থান অদল বদল করে নিচ্ছে রাজনীতি ও নাশকতা। রক্ত ঝরছে, স্বজনহারাদের আর্তনাদে ভারি হয়ে উঠছে আকাশ। হিন্দুস্থান টাইমস লিখেছে, গৃহযুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ছে বাংলাদেশে।
শান্তিভূমি পুণ্যভূমি বাংলাদেশ আবার যুদ্ধভূমি? তাহলে কোথায় সেই শুভবুদ্ধি? সোমবারের ওই বৈঠকেই প্রধানমন্ত্রী ইসলামী দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার নির্দেশ দিয়েছেন বন ও পরিবেশ মন্ত্রী হাছান মাহমুদকে। তিনি জানেন, এই আলোচনার পথই একমাত্র পথ। এ পথেই সমাধান ঘটতে পারে বিরোধ, বিবাদ, বিভ্রান্তির।
কিন্তু সবাই কি তা জানেন? বা সবাই কি তা চান?
বিভাজিত জাতির উন্নতি কঠিন জেনেও আমরা বিভাজিত। এ বিভাজন এখন তীব্র। সবাই জানেন বিচারক, শিক্ষক, সাহিত্যিক, সাংবাদিকরা যদি দলীয় হয়ে যান তাহলে দেশের মানুষের দাঁড়াবার আর জায়গা থাকে না, তারপরও আমাদের অনেকের চলন বলন কাজকর্ম তো দলীয় কর্মীদের চেয়েও উগ্র আক্রমণাত্মক হয়ে উঠেছে। এর অবসান কোথায়?
প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের খবর ‘মন্ত্রীদের অতিকথনে ক্ষুব্ধ প্রধানমন্ত্রী’ শিরোনামে ছাপা হয়েছে মানবজমিন-এ। খবরটির লিঙ্ক ফেসবুক-এ দেয়ার কিছুক্ষণ পরেই মন্তব্য আসে এক স্নেহভাজন কবি-সাংবাদিকের, ‘চ্যানেলগুলোর... বন্ধ হবে এতে? মন্ত্রীদের ক্যামেরা-প্রীতি থাকবে না... বলেন কি?’
প্রশ্নটি মিডিয়ার প্রতি। কারণ উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে সে। কিন্তু এ সঙ্কটকালে কি  হতাশার কারণ হয়ে উঠছে তার ভূমিকা? আসলে আমাদের দেশে কি ভূমিকা নেয় মিডিয়া? স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে নিজের যে ভূমিকা বেছে নেয় মিডিয়া আসলে তার ওপরই নির্ভর করে সঙ্কটকালীন পরিস্থিতিতে তার ভূমিকা। সে কি সমাজের নেতা? নাকি সংস্কারক? পরিবর্তনের অনুঘটক? নাকি খবর ও মতামতের বাহক মাত্র? বার্তাবাহক হিসেবেও কি সে স্বাধীন নাকি অভ্যন্তরীণ বা বহিঃস্থ চাপ বা শক্তির দ্বারা নিয়ন্ত্রিত?
যা-ই হোন, দয়া করে সাঁকো নাড়তে বলবেন না কাউকে। -

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন