বৃহস্পতিবার, ২৬ জুলাই, ২০১২

একালের রূপকথা

এক যে আছে হোমরা ও চোমরা। লেখাপড়া, চাকরি ও ব্যবসা - কোনওটাতে সুবিধা করতে না পেরে তারা পার্টি করে খায় এখন। নেতার নামে চালায় সমিতি-সংগঠন। খায় চাঁদা-তোলা তুলে। নাম কা ওয়াস্তে অনুষ্ঠান-কর্মসূচিও করে হুমকি দিয়ে অন্যদের ঘাড় মটকে। সেখানে খরচপাতি করে নামমাত্র, বাকি পুরোটাই গোঁজে ট্যাঁকে। ইলেকশন জনসভা সংবর্ধনা ইত্যাদি থাকলে ওই গোঁজার পরিমাণ বাড়ে অনেক। এ সব করে-করেই গাড়ি বাড়ি নারী সব হয় হোমরা ও চোমরা’র। সমাজ-সম্মানও হয়। আতি থেকে পাঁতি, তারপর নেতাই হয়ে ওঠে।
তাদের এ পর্যন্ত সব ওঠাই কিন্তু পাবলিকের টাকা মেরে। কাজেই ওই মারার অভ্যাস আর যায় না কিছুতে। বাকি জীবন কাটে পরেরটা খেয়ে ও মেরে। নেতা হয়ে সময়-সুযোগ পেয়ে ওই মেরে-মেরেই নমিনেশন কেনে তারা, ইলেকশন করে, জেতে, এমপি-মন্ত্রী হয়। এজন্য ট্যাঁক থেকে খসাতে হয় না কিছু, বরং এ সবই হয়ে ওঠে বড়-বড় দানে ট্যাঁকে গোঁজার উপায়। সরকারে পদ পাওয়ার পর আয়-উপার্জন আরও বাড়ে হোমরা ও চোমরা’র। সেখানে খরচ নেই, সব কিছু সরকারের। সরকারের মাল মানে তো দরিয়া মে ডাল! কিন্তু সরকার বা রাষ্ট্রের অর্থ তে জনগণের অর্থ। সরকারের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী জনগণের অর্থে শিক্ষালাভ করে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করেন জনগণের অর্থে। ওই অর্থ নির্বিশেষে সকল দেশবাসীর, কোনও বিশেষ দলের নয়। এই অর্থে কোনও দলাদলি না করারই কথা, কিন্তু কাজের চেয়ে দলাদলিই  বেশি করেন তাঁদের অনেকে। এই তাঁদেরই কাজে লাগিয়ে, ব্যবহার করে আঙুল ফুলে কলাগাছ থেকে বটগাছ হয় হোমরা ও চোমরা। কোনও খরচ নেই, কেবলই আয় আর আয়। বিত্ত আর সম্পদ। ধন আর ঐশ্বর্য।
কাজ কি হোমরা ও চোমরা’র? আমলা খাটিয়ে খাওয়া। আলিশান বাড়িতে থাকা। লেটেস্ট মডেলের ঝাঁ চকচকে গাড়ি হাঁকানো। সপরিবারে দলে-বলে বিদেশে-বিদেশে ঘোরা। ফাইভ স্টার। শপিং। হাই-ফাই। ছেলেপুলে পড়ানো ইউরোপ-আমেরিকার নামী-দামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। দেশে বাড়ছে জনসংখ্যা, পণ্যমূল্য, গ্যাস পানি বিদ্যুৎ বিভ্রাট, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, কোন্দল-হানাহানি, মাদকাসক্তি, রোগ-ব্যাধি, দারিদ্র্য, শ্রমিক অসন্তোষ, শিক্ষাঙ্গনে অস্থিরতা, দুর্নীতি, কুশাসন, জাল-ভেজাল, চোরাকারবার, অনিয়ম, অব্যবস্থা, অনুন্নয়ন। তাতে হোমরা-চোমরার কি? তারা বিবৃতি বক্তৃতা ভাষণ দিয়ে যাচ্ছে গলা ফাটিয়ে। সাজগোজ করে যাচ্ছে সভা, সেমিনার, টিভি-বেতারে দেশ জাতি জনগণের জন্য জানপাত করে যাচ্ছে দিন-রাত।
আসলে কি তাই? জনগণের কাছ থেকে নেয়া ছাড়া জনগণকে কখনও কিছু দেয় কি হোমরা-চোমরা? নিজেরা কি কিছু করতে পারে তারা? নিজেদের প্রচারের জন্য সরকারের বা অন্যের পত্রিকা বা বেতার-টিভি তাদের ভরসা, নিজেদের কিছু নেই ও সব। থাকলেও পাতে নেয়া যায় না সেগুলো। হোমরা-চোমরাকে বলি, পরোপকারের নামে আর কত নিজের উপকার করবে? সত্যি-সত্যি কিছু করো পরের জন্য। নাহয় একটা ছোটখাটো রাস্তাই করো। সেতু না পারো অন্তত একটা কালভার্ট করো। লোকজনের জন্য খাবার পানির ব্যবস্থা করো বিভিন্ন ভিড়ের স্থানে। শহরে-শহরে পাবলিক টয়লেট করে দিয়ে নারী শিশু বৃদ্ধদের কষ্ট দূর করো। নোংরা জঞ্জাল আবর্জনা সরাবার ও রিসাইক্লিং করার ব্যবস্থা করলে উপকার হয়, আয়ও হয়। মানে কিছু একটা করো। সামান্য হলেও করো। দেখিয়ে দাও নিজের অর্থে নিজেরা কিছু করতে পারো। হোমরা-চোমরা বলে, ঠিক বলেছো ভাই। এটা আমাদের মনের কথা। এটা আমরাও চাই। কিন্তু কিভাবে হাত উপুড় করতে হয় তা আগে শিখিয়ে দাও আমাদের। বলেই কেমন আমতা-আমতা করে হোমরা-চোমরা, মনে হয় শিখলেও হবে না। আমাদের হাতেই তো উপুড় করার সিসটেম নাই! অপারেশন ছাড়া হাত উপুড় হবে না!
sazzadqadir@rediffmail.com

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন