শনিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১২

আমার ব্যাংক ঋণ

ব্যাংক নিয়ে এত খবর আগে তোলপাড় করে নি সংবাদমাধ্যমকে। প্রথমে গ্রামীণ ব্যাংক, তারপর বিশ্ব ব্যাংক, আর এখন সোনালী ব্যাংক। তিনটি ক্ষেত্রেই সরকার বা সরকারের লোকজন অভিযুক্ত। এর আগে থেকেই অভিযোগ শোনা যাচ্ছিল - সরকার ব্যাংক থেকে ঋণ নিচ্ছে দেদার। এ কারণে গ্রাহকদের একটু বেশি অঙ্কের পাওনা টাকা দিতে পারছে না ব্যাংকগুলো। ঘটনা সত্য। আমার পরিচিত একজনের বিপত্তির খবর জেনে বুঝলাম, কত সর্বনাশের কারণ হয়ে উঠেছে এসব আর্থিক কেলেঙ্কারি। সারা জীবনে তিনি আয়-উপার্জন যা করেছেন তা থেকে কিছুটা সঞ্চয় করেছেন ভবিষ্যতে ঘরবাড়ি নির্মাণের আশায়। ব্যাংকে রাখা সে সঞ্চয় এমন কিছু নয়। তারপরও নির্মাণকাজ শুরু করার পর টাকা তুলতে গিয়ে হোঁচট খাচ্ছেন প্রায়ই।
    এ তো নিজের জমানো টাকা। এ টাকা নিয়েই এত সমস্যা। কিন' সমস্যা নেই ঋণ পেতে। কিছু লোককে খুশ করলে যত খুশি ঋণ নেয়া যায়। অথচ আমার ধারণা ছিল খুব জটিল কঠিন বিষয় এই ঋণ পাওয়াটা। বছর আটেক আগে ফ্ল্যাট কেনার জন্য ঋণ পেতে ব্যাংকে-ব্যাংকে ছুটোছুটি করেছি খুব। কাগজপত্র ঘেঁটে, কথা বলে জেনেছি - ৫০% থেকে ৭০% পর্যন্ত ঋণ পাওয়া যায়, তবে সুদের হার নানা রকম। তারপর ব্যাংক যখন প্রয়োজন মনে করবে তখন তাদের ইচ্ছামাফিক বাড়িয়ে নেবে সুদের হার। এছাড়া বয়সেরও ব্যাপার আছে একটা। চুক্তি দুই পক্ষের মধ্যে হলেও সকল শর্ত থাকবে ব্যাংকের পক্ষে। গ্রহীতার পক্ষে কিছু নেই।
    অনেক মাথা ঘামিয়ে, সুদের হার কিছু কম, এমন এক ব্যাংককে বেছে নিই আবেদন করার জন্য। সেখানকার ঋণপ্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত একজন পদস' কর্মকর্তার সঙ্গে যাই দেখা করতে। এক সময় সাংবাদিক ছিলেন তিনি, এজন্য আশান্বিত ছিলাম বিশেষভাবে। কিন' আমার সাংবাদিক পরিচয় পেয়েই তিনি বলেন, আমিও সাংবাদিক ছিলাম। কিন' সে পরিচয় আর দিই না এখন। বহু সাংবাদিককে বাড়ি করার জন্য ঋণ দিয়েছি আমরা। কিন' নিয়মিত দূরে থাক কোনও কিস্তিই দেন না তাঁদের অনেকে। চিঠি দিলে রাগারাগি করেন, তেড়ে আসেন, হুমকিও দেন।
    বিড়ম্বনার আরও অনেক কাহিনী শোনান তিনি। শেষে বলেন, ‘সাংবাদিকদের ঋণ আমরা দেবো না - এটা আমাদের নীতিগত সিদ্ধান্ত।’ ওই কর্মকর্তা এখন ওই ব্যাংকের ব্যবস'াপনা পরিচালক।
    এভাবে ব্যাংক ঋণ পেতে গিয়ে প্রত্যাখ্যাত হই আমি। সুদীর্ঘ ৪০ বছর (এখন ৫০ বছর) লেখক-সাংবাদিক হিসেবে শতভাগ সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে ওই জোটে আমার যাবতীয় অযোগ্যতার পুরস্কার। এরপর ঋণ পেতে ব্যাংকে ছুটোছুটি করেন আমার স্ত্রী ও তাঁর পক্ষের আত্মীয়-স্বজন। সেখানকার কর্মকর্তারা রাশি-রাশি কাগজপত্র দাবি করতে থাকেন আর সেগুলো যোগাড় করতে-করতে প্রায় আধখানা হয়ে যান মহিলা। তারপরও শেষ হয় না এ দাবি, ও দাবি। শেষে সরজমিন তদন্তে আসেন এক কর্মকর্তা। কথায়-কথায় তিনি জানান, তাঁর মা আমার ছাত্রী। পরিচয় দিতেই মনে পড়ে যায় আমার সেই ১৯৭২-৭৬ সালের অধ্যাপনা-জীবনে ক্লাশে ও টিউটোরিয়ালে দেখা তরুণীটিকে। মেধাবী ছাত্রী হিসেবে আমার প্রিয় ছিল সে, আমার প্রতিও ছিল তার অনেক শ্রদ্ধা-সম্মান। সেই ছাত্রীর সন্তান? খুব খুশি হই এই আশায় যে, এবার সব ফ্যাকড়া শেষ। কারণ তাঁর রিপোর্টের ভিত্তিতেই মঞ্জুর হবে ঋণ।
    তা অবশ্য হয় নি শেষে। তিনি এমন রিপোর্ট দেন যে তাতে অসম্ভব হয়ে ওঠে আমার ঋণ পাওয়া।


sazzadqadir@rediffmail.com

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন