বৃহস্পতিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১২

গুগলে গণ্ডগোল

‘ইনোসেন্স অভ মুসলিমস্‌’  নামে গুগল নিয়ন্ত্রিত ইউটিউব-এ প্রচারিত ১৩ মিনিট ৫১ সেকেন্ডের ভিডিও ক্লিপটি ঘরোয়া ভাবে নির্মিত। এর লেখক ও প্রযোজক স্যাম বাসিল ওরফে নাকুলা বাসেলি নাকুলা। বলা হয়েছে, ক্লিপটি আসলে মূল ছবির প্রচারচিত্র (ট্রেলার)। সে ছবির অবশ্য কোনও খোঁজ মেলে নি এখনও। একটি খবরে বলা হয়েছে, গত ২৩শে জুন হলিউড-এর ভাইন থিয়েটারে একবারই প্রদর্শনী হয়েছে ছবিটির। তখন পোসটারে এর নাম ছিল ‘ইনোসেন্স অভ বিন লাদেন’। প্রদর্শনীতে উপস্থিত ছিলেন মাত্র ১০জন দর্শক। জুলাই মাসে ভিডিও ক্লিপটি ইউটিউব-এ আপলোড করা হয় ‘দ্য রিয়াল লাইফ অভ মুহাম্মদ’ ও ‘মুহাম্মদ মুভি ট্রেলার’ নামে। এর আরবি ভার্সন আপলোড করা হয় সেপটেম্বরের গোড়ার দিকে। তখন ইমেইল-এর মাধ্যমে এর প্রচারে ভূমিকা রাখেন মিশরি-মারকিন কপটিক খ্রিস্টান আইনজীবী ও আন্দোলনকর্মী মরিস সাদেক। তিনি ঘোরতর ইসলাম-বিদ্বেষী হিসেবে বিশেষভাবে পরিচিত। নির্মাণকালে ছবিটির নাম ছিল ‘ডেজার্ট ওয়ারিয়র’। শিল্পীদের বলা হয়েছিল, দু’ হাজার বছর আগে আকাশে ধূমকেতুর আবির্ভাবে গোত্রে-গোত্রে যুদ্ধ বেঁধে যাওয়ার কাহিনী নিয়ে তৈরি হচ্ছে ছবিটি। চিত্রায়নের পর শিল্পীদের না জানিয়ে ওভারডাবিং করে ইসলাম-বিদ্বেষী বিষয়বস্তু ঢোকানো হয় এতে। ছবিটির প্রচারে মুখ্য ভূমিকা রেখে চলেছেন আমেরিকায় কোরান পোড়ানো আন্দোলনের নেতা প্যাস্টর টেরি জোন্স। তবে মুসলিম পাবলিক এফেয়ার্স কাউন্সিল-এর মরিয়ম মহিউদ্দিন বলেছেন, মূল ছবির কোনও অস্তিত্বই নেই। আমরা তন্ন-তন্ন করে খুঁজেছি অনেক, কিন্তু মেলে নি কিচ্ছু।
    ভিডিও ক্লিপের বিষয়বস্তু ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে মুসলিম বিশ্ব। প্রতিবাদ-বিক্ষোভ চলছে সর্বত্র। সহিংসতা-প্রাণহানি ঘটেছে, রয়েছে আরও ঘটার আশঙ্কা। কিন্তু গুগল কর্তৃপক্ষ রাজি নন ইউটিউব থেকে ট্রেলারটি সরিয়ে দিতে। বিশ্বব্যাপী দাবি ওঠা সত্ত্বেও তাঁরা বলছেন, এতে ক্ষুণ্ন হবে মত প্রকাশের স্বাধীনতা - লঙ্ঘন করা হবে মারকিন সংবিধানের প্রথম সংশোধনী। (“In the United States, a law against blasphemy, or a prosecution on that ground, would violate the American Constitution. The First Amendment to the United States Constitution provides ‘Congress shall make no law respecting an establishment of religion, or prohibiting the free exercise thereof; or abridging the freedom of speech, or of the press...’ while there are no federal laws which forbid ‘religious vilification’ or ‘religious insult’ or ‘hate speech’, some states have blasphemy statutes.”)
    ভিডিও ক্লিপটি সম্পর্কে সকল মারকিন পত্রপত্রিকায় প্রায় একই ভাষায় লেখা হয়েছে, এটি অত্যন্ত কাঁচাভাবে নির্মিত একটি কদর্য ছবি। সে ক্ষেত্রে বলতে হয়... গুগল কর্তৃপক্ষ প্রকাশের স্বাধীনতার নামে জেনেশুনেই প্রশ্রয় দিচ্ছে উচ্ছৃঙ্খলতা, অশ্লীলতা ও বিকৃত আচারকে। এ প্রশ্রয়ের ফল মারাত্মক হতে বাধ্য। এর পর থেকে যে কোনও উৎসাহী ব্যক্তি যা ইচ্ছা তা-ই ভিডিও আকারে আপলোড করতে পারবে ইউ-টিউবে। তাহলে তো জনপ্রিয় এ মাধ্যমটি ক্রমশ পরিণত হবে ঘৃণা, বিদ্বেষ, হিংসা, আক্রোশের এক জঘন্য হানাহানি-স্থলে। প্রকাশের স্বাধীনতার অজুহাতে এমন বিশৃঙ্খলা ও বিকৃতির স্বাধীনতা দেয়া কি মানবাধিকার লঙ্ঘন নয়?
    ‘ইনোসেন্স অভ মুসলিমস্‌’-এর অভিনেতা-অভিনেত্রীরাও অভিযোগ করেছেন, তাঁদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে নির্মাতারা। এ প্রতারণা কি ক্ষুণ্ন করে নি শিল্পীর অধিকারকে? মানবাধিকারকে?
    এরই মধ্যে ইউটিউব-এ বিশেষ উদ্দেশ্যমূলক ভিডিও আপলোড করে নির্বাচনী বিধি লঙ্ঘন করায় ব্রাজিলের এক বিচারপতি ওই দেশের গুগল-কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিয়েছেন। এর বিরুদ্ধে অবশ্য আপিল করেছে গুগল। কিন্তু তাদের স্বাধীনতার ব্যাখ্যা যে ভবিষ্যতে এমন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে বারবার তাতে সন্দেহ নেই কোনও। তবে আমাদের বিশেষ ভাবে দেখতে হবে, আমরা যেন এমন কিছু না করি যাতে ‘ইনোসেন্স অভ মুসলিমস্‌’-এর নির্মাতাদের মতলব হাসিল হয়ে যায় অবলীলায়। কাঁচা হোক, কদর্য হোক... তারা তো বিশেষ দুরভিসন্ধি নিয়েই করেছে দুষ্কর্মটি?

sazzadqadir@gmail.com

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন