শনিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১২

স্মাগলারদের পোষ্য যারা

ভারতের বাংলাদেশ-বিরোধিতাকে আমরা বলি ‘দাদাগিরি’, ভারতের সঙ্গে দেয়ানেয়ায় আমরা যখন দেশীয় বা জাতীয় স্বার্থ নিয়ে প্রশ্ন তুলি তখন বলা হয় ‘ভারত-বিরোধিতা’। আসলে সব দেশ ও জাতিই দেখে নিজ-নিজ স্বার্থ। তাতে কিন' দোষ হয় না, কেবল দোষ ঘটে আমাদের বেলায়। অথচ দু’ দেশের স্মাগলার আর কতিপয় দুর্নীতিপরায়ণ ও মতলববাজ আমলার কারণেই শুধু মাঝেমধ্যে দেখা দেয় নানারকম টানাপড়েন। এমনিতে দু’ দেশের জনগণ ও রাজনীতিকদের প্রায় সকলেই অত্যন্ত বন্ধুভাবাপন্ন। অতি অল্প কিছু দুষ্ট সব দেশেই আছে, বাংলাদেশ ও ভারতেও আছে। তাদের দায় কেন নিতে হবে সবাইকে? বাংলাদেশে আইএসআই থাকলে র’ কি নেই? বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যত কথাই বলা হোক, এখানে বাবরি মসজিদ, গুজরাত বা আসামের পর্যায়ে বা মাত্রায় কোনও ঘটনা কখনও ঘটায় নি বাংলাদেশের মানুষ। আসলে ভারত-বিরোধিতা বলতে কিছু নেই বাংলাদেশে। ভারতের বিরুদ্ধে কি করবে বাংলাদেশ? যুদ্ধ না কচু? কিছু লোক ভারত-বিরোধী জিগির তোলে, ভারতীয় পণ্য পোড়ায় - খোঁজ নিলে জানা যাবে, ওরা দু’ দেশের স্মাগলারদের পুষ্যি। ভারতীয় শাড়ি, ড্রেস, প্রসাধনী ও অন্যান্য ভোগ্যপণ্যের দাম বাজারে কমতে শুরু করলেই মাঠে নামানো হয় তাদের। এজন্য দেখা যায় প্রতি বছর পুলিশ ও অন্যদের দিয়ে দোকানে-দোকানে তল্লাশি চালানো হয় ঈদের আগে-আগে। তাতে পুলিশের তোলা ওঠানোও হয়ে যায়, দামও প্রায় দ্বিগুণ বাড়ানো যায় এক লাফে।
    গত ৪০ বছরে সম্পর্কের নানা পর্যায় পেরিয়ে এসেছে বাংলাদেশ ও ভারত। এতগুলো বছর ধরে ক্রমান্বয়ে অনেক কিছু নিয়মিত হওয়ার পর কিছু-কিছু বিষয় মীমাংসার অপেক্ষায় রয়েছে এখনও। তবে দু’ দেশের বর্তমান সরকারের মধ্যে যে আন্তরিকতা দেখি তাতে সমাধান খুব দূরে নয় আশা করছি। সীমান্তে হত্যা, ছিটমহল হস্তান্তর, অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন প্রভৃতি অল্প কয়েকটি বিষয় এখন রয়েছে কষাকষির পর্যায়ে। এ ছাড়া ভিসা ও সীমান্ত অতিক্রম পদ্ধতি সহজতর করা দু’ দেশের জন্যই মঙ্গল। চিকিৎসা, শিক্ষা, তীর্থ দর্শন, ভ্রমণ ও অন্যান্য কাজে অনেক বাংলাদেশী যান এবং আরও অনেক যেতে চান ভারতে। ব্যবসা-বাণিজ্য ছাড়া এতেও প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় হচ্ছে এবং আরও হতে পারে তাদের। আর হ্যাঁ, সীমান্তে ও অন্যান্য স'ানে এই বৈদেশিক মুদ্রাদাতারা ভাল ব্যবহার আশা করতেই পারেন। আসলে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ক্ষেত্রে বিস্ময় ঘটাবার জাদু একটাই - ভারতের উদার মনোভাব। পরস্পরের স্বার্থে এতটুকু ছাড় না দিয়েও এ মনোভাব বজায় রাখা যায়।
    বর্তমান সরকারের আমলে অনেক ক্ষেত্রেই যোগাযোগ বেড়েছে ভারতের সঙ্গে। ভবিষ্যতে আরও বাড়বে বলে আশা করছি আমরা। ১৯৬৫ সালের পর বন্ধ হয়ে যাওয়া অনেক যোগাযোগ রুট চালু হচ্ছে একে-একে। চলচ্চিত্রও আসছে। কলকাতার বাংলা ছবি এসেছে তিনটি। বলিউডের ন’টি হিন্দি ছবি আসছে শিগগিরই। কিন' আমদানিকারকরা ব্লকবাসটার ছবিগুলো আনতেই বেশি আগ্রহী। আমরা আশা করেছিলাম দর্শক ও সমালোচক উভয় মহলে প্রশংসিত ছবিগুলো এলে আমাদের এখানকার প্রেক্ষাগৃহযাত্রীর সংখ্যা বাড়তো, প্রেক্ষাগৃহগুলোরও পরিবেশ ও ব্যবস'া উন্নত হতো। কিন' সে আশায় দেখছি গুড়ে বালি!
    ভারতীয় পণ্য আসে বৈধ-অবৈধ নানা পথে। তারপরও সীমান্তে শুল্ক, কর, ঘুষ এবং পথে-পথে তোলা-চাঁদা সত্ত্বেও দেখা যায় বাজারে ভারতীয় পিয়াজ ২৫ টাকা হলে দেশী পিয়াজ ৩৫ টাকা। তবে সর্বত্র এমন নয়। অনেক ভারতীয় পণ্য কিনতে হয় দ্বিগুণ-ত্রিগুণ দামে। বিলাস-সামগ্রীর ক্ষেত্রে এটা সহ্য করতে পারেন বিলাসীরা, কিন' আমরা তো আর সে সব না হলেও চলে। আমাদের দরকার বই। ছাত্র, শিক্ষক, গবেষক, সাংবাদিক, লেখক, বিচারক, আমলা, রাজনীতিক - সবার দরকার বই। সে বই-পত্র তো বিলাস-সামগ্রী নয়, তা কেন কিনতে হবে দ্বিগুণ-ত্রিগুণ দামে? এর কারণ নাকি সরকারের চাপানো নানা রকম ট্যাক্স-করের বোঝা। শিক্ষা-সংস্কৃতির সঙ্গে সম্পর্কিত পণ্যে এত বোঝা কাম্য নয় আমাদের। সমাজ-উন্নয়নের বৃহত্তর স্বার্থে বিষয়টি কি ভেবে দেখবেন সংশ্লিষ্টরা?

sazzadqadir@gmail.com

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন