শনিবার, ২১ জানুয়ারী, ২০১২

রসরাজের দয়া

রঙ্গ-রসিক ছিলেন রবীন্দ্রনাথ। জীবনে অনেক শোক-তাপ বিদ্বেষ-বৈরিতা সয়েছেন, তারপরও গেয়েছেন দুঃখজয়ের গান, থাকতেন হাসিখুশি রঙিন। কথায় কথায় করতেন কৌতুক, আর সে কৌতুক করতেন প্রায় সকলের সঙ্গেই। পুত্র, পুত্রবধূ, বন্ধু, সেবক, ভৃত্য—সবাই হতেন তাঁর কৌতুকের লক্ষ্য। ভৃত্য বনমালী দেরি করছে চা আনতে। রবীন্দ্রনাথ বিরক্ত হয়ে বললেন, ‘চা-কর বটে তবে সু-কর নয়।’ এর মধ্যে চা নিয়ে হাজির বনমালী। তখন কপট রাগে রবীন্দ্রনাথ বলেন, ‘তুই বোধহয় জানিস না যে তোর অতুলনীয় অকর্মণ্যতায় আমি খুব বেশি পুলকিত হই নি।’
এক পত্রিকা প্রসঙ্গে কথা হচ্ছে, রবীন্দ্রনাথ বললেন, ‘একদা সম্পাদক ছিলাম আমি এই পত্রের।’ একজন জিজ্ঞেস করেন, তখন অমুক কি সহ-সম্পাদক ছিলেন? সঙ্গে-সঙ্গে উত্তর দেন রবীন্দ্রনাথ, ‘সহ কি দুঃসহ বলতে পারি না, তবে ছিলেন মনে হচ্ছে।’ কবি সুধাকান্ত রায় চৌধুরী (১৮৯৬-১৯৬৯) ছিলেন রবীন্দ্রনাথের দীর্ঘকালীন সহচর ও একান্ত সচিব। প্রায় ৫০ বছর কাটিয়েছেন বিশ্বভারতী ও শান্তিনিকেতনের নানা বিষয়ক সেবায়। তাঁর মাথা জুড়ে টাক ছড়িয়ে পড়ছে দেখে রবীন্দ্রনাথ একদিন জিজ্ঞেস করেন, ‘তোর শিরোদেশ যে ক্রমেই মেঘমুক্ত দিগন্তের আকার ধরেছে রে!’ সুধাকান্ত বলেন, ‘আমার বাবারও ওই রকম হয়েছিল শেষ জীবনে।’ সশব্দে হেসে ওঠেন রবীন্দ্রনাথ। বলেন, ‘তাইতেই বুঝি শিরোধার্য করেছিস্ ওটা?’ সাংবাদিক-সাহিত্যিক-গবেষক নন্দগোপাল সেনগুপ্ত (১৯১০-১৯৮৮) ছিলেন রবীন্দ্রনাথের সাহিত্য সচিব (১৯৩৭-১৯৩৯)। এক লেখার অংশবিশেষ সম্পর্কে তিনি জানতে চান, ‘বাদ দেবো কি এটুকু?’ মুহূর্তেই উত্তর দেন রবীন্দ্রনাথ, ‘নিশ্চয়ই-নিশ্চয়ই, বাদ দাও, নইলে বিবাদ হবে।’
রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন, ‘রস যোগান দিলেই যে রস ভোগ করা যায় তা নয়, নিজের অন্তরে রসরাজের দয়া থাকা চাই।’ (‘শ্রাবণগাথা’, রবীন্দ্ররচনাবলী ১৩) এ রসরাজের দয়া তিনি পেয়েছিলেন উজাড় করে দেয়া, আর তাকে ছড়িয়ে দিতেও পেরেছিলেন জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে। সেই ছড়ানো-ছিটানো মানিক-রতন কিছু চয়ন করা হলো এখানে।
গরমের ছুটি। শান্তিনিকেতন ফাঁকা। বেশির ভাগ ছাত্র চলে গেছে বাড়িতে। তাদের বরাদ্দ দুধ প্রতিদিন বাড়তি থাকে তাই। এ কথা রবীন্দ্রনাথকে জানান পরিচালক। কথাটা শুনে একটু ভাবেন রবীন্দ্রনাথ। পরে বলেন, শাস্ত্রী মশাই তো শান্তিনিকেতনে আছেন—তিনি নিরামিষভোজী—তাঁকেই বেশি করে দুধ দিন।
এই বলে একটি চিরকুটে দু’ছত্র লিখে ভৃত্যকে ডেকে পাঠিয়ে দেন বিধুশেখর শাস্ত্রীর কাছে। সে চিরকুট পড়ে শাস্ত্রী মশাই হা। তাতে লেখা, “শাস্ত্রী মশাই, এখন থেকে আপনার কাছে দৈনিক তিন-চার সের দুধ যাবে। আপনাকে দুগ্ধপোষ্য করে রাখবো মনস্থ করেছি।”
শাস্ত্রী মশাই অবশ্য নিরামিষাশী ছিলেন কিছু দিন। সেই সময়ে একবার অসুখ হয় তাঁর। চিকিত্সক তাঁকে পথ্য দেন মাছের ঝোল। কিন্তু তা খেতে তিনি রাজি নন কিছুতেই। শেষে রবীন্দ্রনাথ রোগের ঔষধ হিসেবে মাছের ঝোল খেতে অনুরোধ করেন তাঁকে। এ অনুরোধ ঠেলতে পারেন না তিনি। শাস্ত্রী মশাই যেদিন পথ্য করবেন—সেদিন সেই সময়ে রবীন্দ্রনাথ গিয়ে হাজির সেখানে। বলেন, আজ উত্সব। শাস্ত্রী মশাই ‘মীনাসনে’ বসবেন!
একদিন ছবি আঁকছেন রবীন্দ্রনাথ। পাশে দাঁড়িয়ে একমনে তা দেখছেন বিধুশেখর শাস্ত্রী। হঠাত্ জিজ্ঞেস করেন, গুরুদেব, আপনি এত কাজকর্ম লেখাপড়ার ভেতরে আঁঁকাটা কিভাবে শিখলেন?
রবীন্দ্রনাথ উত্তর দিলেন গম্ভীরভাবে, সরস্বতী প্রথমে আমাকে নিজের লেখনীটি দয়া করে দিয়েছিলেন, তারপর অনেক দিন কেটে গেল। তিনি ভাবলেন, না কাজটা তো সম্পূর্ণ হয় নি, সম্পূর্ণ করতে হবে, তাই তিনি নিজের তুলিকাটিও আমাকে দান করে গেলেন।
মহামহোপাধ্যায় বিধুশেখর ভট্টাচার্য শাস্ত্রী (১৮৭৮-১৯৫৭) বিশ্বভারতীতে অধ্যাপনা করেছেন একাদিক্রমে ৩০ বছর। তিনি ছিলেন বেদান্ত ও বৌদ্ধ শাস্ত্রে সুপণ্ডিত। ‘দেশিকোত্তম’ পান ১৯৫৭ সালে।
একদিন জরুরি কাজের কথা হচ্ছে, হঠাত্ রবীন্দ্রনাথ বলে ওঠেন, শাস্ত্রী মশাই, আপনি তো বৌদ্ধ শাস্ত্রে অগাধ পণ্ডিত, অথচ আপনার হিংসা প্রবৃত্তি গেল না!
অভিযোগ শুনে শাস্ত্রী মশাই তো ভীষণ অবাক। হিংসার কাজ কি করেছেন, তা ভেবেই পান না! অনেকটা ফ্যাল-ফ্যাল করে চেয়েই আছেন। তখন ইঙ্গিতে তাঁর গোঁফ দেখিয়ে রবীন্দ্রনাথ বলেন, বাড়তে দিন—এদের বাড়তে দিন—হিংসা করে গুম্ফহীন হবেন না।
ভাবখানা, তাঁর নিজের সুপুষ্ট গোঁফ নিয়ে বুঝি সবার খুব হিংসা! তবে শাস্ত্রী মশাইয়ের সঙ্গে এমন রসিকতা প্রায়ই করতেন রবীন্দ্রনাথ। আরেক বার... তখন শান্তিনিকেতন আশ্রমের আর্থিক অবস্থা খুব খারাপ। সে সব নিয়ে আলোচনা চলছিল, এর মধ্যে শাস্ত্রী মশাই বলেন, গুরুদেব, যদি একটা কাজ করতে পারেন তো অর্থের আর কোনও অনটন থাকবে না। কেবল আশ্রমের নয়, আপনারও নয়, আমাদেরও নয়, বেশ সুখে দিন কেটে যাবে।
কি রকম? জানতে চান রবীন্দ্রনাথ।
সেটা খুব সোজা। আপনি যদি সন্ন্যাস গ্রহণ করতে পারেন। একটা কৌপীন এঁটে যদি কাশীর দশাশ্বমেধ ঘাটে একবার বসতে পারেন, তবে আর ভাবনা কি? আপনার দাড়ি চুল তো লম্বা আছেই। চেহারাখানাও সুন্দর। লোকে যখন জানবে, রবি ঠাকুর সন্ন্যাসী হয়েছে, তখন টাকা-কড়ি, ফলমূল নানারকম খাদ্য আসতে থাকবে। দেখতে দেখতে শ্বেতপাথরের একটা মন্দিরও হতে পারবে, তাতে আপনাকে স্থাপন করা হবে। সেখানে ভক্ত ও শিষ্যদের ভিড় ঠেলা অসাধ্য হয়ে উঠবে।
কিন্তু আমি যে সংস্কৃত বচন ঝাড়তে পারবো না! অসহায়ত্ব প্রকাশ করেন রবীন্দ্রনাথ।
সেজন্য ভাবনা কি? ক্ষিতি ও আমি আপনার চেলা হয়ে সঙ্গেই থাকবো। থাকতেই হবে, অন্যথায় ভক্তদের দানগুলি সামলাবে কে? ক্ষিতির বপুখানিও তো স্বয়ং একটি সন্ন্যাসীরই মতো। তাকে বেশ মানাবে। তা ছাড়া আপনি মৌন থাকবেন। যা কিছু বলবার কইবার আমরা দু’জনে করবো।
রবীন্দ্রনাথ বলেন, তা ভালই হবে। আমি মৌনী থেকে একটা আঙুল তুলবো, আর আপনারা তা দেখে দু’টো আঙুল তুলে সেটা যাহোক একটা ব্যাখ্যা করে দেবেন। ভক্তদের তাক লেগে যাবে। তবে তা-ই করুন।
‘ক্ষিতি’ অর্থাত্ ক্ষিতিমোহন সেন (১৮৮০-১৯৬০) রবীন্দ্রনাথের আহ্বানে শান্তিনিকেতন ব্রহ্মচর্যাশ্রমে যোগ দেন ১৯০৮ সালে, কর্মজীবন শেষ করেন বিশ্বভারতী বিদ্যাভবনের অধ্যক্ষ হিসেবে। কিছুদিন বিশ্বভারতীর অস্থায়ী উপাচার্যও ছিলেন। বিশ্বভারতীর প্রথম ‘দেশিকোত্তম’ উপাধি পান তিনি (১৯৫২)।
ক্লাস চলছে শান্তিনিকেতনে। ইংরেজির ক্লাস। পড়াচ্ছেন রবীন্দ্রনাথ। ক্ষিতিমোহন সেন তখন ছাত্র। সন্ধ্যাবেলা। সে বছর শান্তিনিকেতনে দেওয়ালি (শ্যামা) পোকার খুব উত্পাত। পড়াতে ব্যাঘাত ঘটছে রবীন্দ্রনাথের। এক সময় পড়ানো বাদ রেখে একমনে তিনি আলোর দিকে দেখতে থাকেন পোকাগুলির খেলা। বেশ কিছুক্ষণ চলে এভাবে। শেষে ক্ষিতিমোহন বলে ওঠেন, গুরুদেব, এতক্ষণ আপনি আমাদের ওয়ার্ডসওয়ার্থ পড়াচ্ছিলেন, এবার কি কীট (কবধঃং) পড়াচ্ছেন?
রবীন্দ্রনাথ হেসে ওঠেন এ কথায়।
একবার এক গ্রামে বেড়াতে গেছেন রবীন্দ্রনাথ ও ক্ষিতিমোহন। গ্রামবাসীরা ব্যাপক আয়োজন করেন তাঁদের আপ্যায়নের জন্য। বলতে গেলে কোনও ত্রুটি রাখেন নি তাঁরা। এক সম্ভ্রান্ত ব্যক্তির বাড়িতে নিমন্ত্রণ হয় তাঁদের ভোজনের। সেখানে ভূরিভোজের ব্যবস্থা। ব্যঞ্জনাদি তৈরি হয়েছে বহু রকম। পাশাপাশি খেতে বসেছেন দু’জনে। গৃহকর্তা নিজে আপ্যায়ন করছেন সামনে দাঁড়িয়ে। ক্ষিতিমোহন খাবেন বলে ডিমে হাত দিয়েই বুঝতে পারেন, সেটি পচা। রবীন্দ্রনাথও বুঝতে পারেন। কিন্তু উপায় কি? রবীন্দ্রনাথ কি করেন, তা দেখার জন্য অপেক্ষা করেন ক্ষিতিমোহন।
রবীন্দ্রনাথ হাত দেন ডিমে। মুখে দেন ভাতের সঙ্গে। এ অবস্থায় ক্ষিতিমোহনকেও গিলতে হয় পচা ডিম। আর গিলেই বমি করে ফেলেন তিনি।
পরে রবীন্দ্রনাথকে একলা পেয়ে জিজ্ঞেস করেন, আপনি ওই পচা ডিম হজম করলেন কি করে? আমি তো খেয়েই বমি করলুম!
রবীন্দ্রনাথ হেসে বলেন, খেলে কেন? আমি খাই নি, তাই বমিও করি নি।
খান নি? কিন্তু আমি দেখলুম ডিমটা আপনি মুখে দিলেন!
আমি কি সেই ডিম খেয়েছি নাকি? রবীন্দ্রনাথ বলেন, আমি আমার দাড়ির ভেতর দিয়ে সেই ডিম চাপকানের মধ্যে চালান করে দিয়েছি। এখন ফিরতে পারলেই বাঁচি!
শান্তিনিকেতনে একদিন জমজমাট আসর। অনেক লোক বসে আছেন ঘেঁষাঘেঁষি করে। রবীন্দ্রনাথ ঘরে ঢুকে গম্ভীর হয়ে বলেন, নেপালবাবু, আজকাল আপনার অনেক ভুলচুক হচ্ছে, এ ভাল নয়। আপনাকে দণ্ড পেতে হবে।
এই বলে ধীরে-ধীরে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন তিনি।
নেপালচন্দ্র রায়ের পরিচয় আগেই দিয়েছি, তিনি তখন শান্তিনিকেতনের অধ্যাপক। অভিযোগ শুনে ভাবনায় অস্থির হন তিনি। কোন কাজে কি এমন ভুল হয়েছে যে প্রকাশ্যে এমন করে বলা?
আসরে উপস্থিত সকলের মধ্যেই দেখা দেয় একই রকম উত্কণ্ঠা।
এমন সময় একটা লাঠি হাতে করে ঘরে ঢোকেন রবীন্দ্রনাথ। সেটা নেপালচন্দ্র রায়ের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলেন, এই হলো আপনার দণ্ড (লাঠি), কাল আপনি ভুলে ফেলে গেছেন।
তখন হাসি ফোটে সকলের মুখে।
বিশ্বভারতীর প্রথম যুগের অধ্যাপক নিত্যানন্দবিনোদ গোস্বামী (১৮৯২-১৯৭২) শান্তিনিকেতনে সুপরিচিত ছিলেন ‘গোঁসাইজি’ নামে। শান্তিনিকেতনে বিধুশেখর শাস্ত্রীর অধীনে সংস্কৃত ও পালি বিভাগের গবেষক হয়ে আসেন ১৯২০ সালে। পরে পাঠভবনে যোগ দেন সংস্কৃত ও বাংলার অধ্যাপক হিসেবে। আজীবন কাটিয়েছেন শান্তিনিকেতনেই। বৈষ্ণবশাস্ত্র ও বৌদ্ধদর্শনে অগাধ পাণ্ডিত্যের অধিকারী গোঁসাইজি সংগীত, অভিনয়, চিত্রাঙ্কন ও সাহিত্য সমালোচনায়ও ছিলেন বিশেষ পারদর্শী। বিশ্বভারতী ‘দেশিকোত্তম’ এবং কলকাতা রবীন্দ্র গবেষণা পরিষদ ‘রবীন্দ্রতত্ত্বাচার্য’ উপাধি দিয়ে সম্মানিত করেন তাঁকে।
গোঁসাইজি ছিলেন বেশ একটু স্থূলদেহী। তখন তিনি নতুন অধ্যাপক হয়ে এসেছেন শান্তিনিকেতনে। নতুন বলে রবীন্দ্রনাথ ‘আপনি’ সম্বোধন করতেন তাঁকে। এই ‘আপনি-আপনি’ শুনে বয়সে অনেকে ছোট গোঁসাইজি একদিন অনেক ইতস্তত করে বলেন, আপনি আমাকে ‘আপনি-আপনি’ বলছেন কেন?
রবীন্দ্রনাথ হেসে বলেন, কি করি বাপু! তোমার যে বপুখানি, তার অন্তত মর্যাদা তো দিতে হবে!
পিঠা পুলি খেতে ভালবাসতেন রবীন্দ্রনাথ। শান্তিনিকেতনের এক ভদ্রমহিলা পিঠা তৈরি করে তাঁকে পাঠিয়ে দেন একদিন। ক’দিন পর এসে তিনি জিজ্ঞেস করেন, গুরুদেব, সেদিন যে পিঠা দিয়েছিলাম তা কেমন খেলেন?
রবীন্দ্রনাথ হেসে বলেন, শুনবে? নেহাত্ যখন শুনতে চাও বলি—লোহা কঠিন, পাথর কঠিন, আর কঠিন ইষ্টক/তার অধিক কঠিন কন্যা, তোমার হাতে পিষ্টক!
শুনে উচ্ছ্বসিত হাসিতে ভেঙে পড়েন মহিলাসহ উপস্থিত সকলে।
শান্তিনিকেতনে বসন্ত উত্সব হবে, মহড়া চলছে দিন-রাত। এর মধ্যে সুরেন্দ্রনাথ ঠাকুরের মেয়ে মঞ্জরী সেখানে উপস্থিত। তাকে দেখেই দিনেন্দ্রনাথ (১৮৮২-১৯৩৫)-কে রবীন্দ্রনাথ বলে ওঠেন, দিনু, আমাদের আর ভাবনা নেই। আমের মঞ্জরীর পার্টটা তাহলে মঞ্জরীকেই দেয়া হোক, কি বলিস্?
দিনেন্দ্রনাথ বলেন, আমের মঞ্জরীর তো কোনও পার্ট নেই!
রবীন্দ্রনাথ হা-হা করে ওঠেন, আহা, তা নাই থাক, তা বলে নাতনির সঙ্গে একটু পরিহাস করবো না!
কিন্তু পরিহাস আর রইলো না পরের দিন। রবীন্দ্রনাথ গান লিখলেন—‘মঞ্জরী, মঞ্জরী ও আমের মঞ্জরী...’!
সুরেন্দ্রনাথ (১৮৭২-১৯৪০) দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের দ্বিতীয় পুত্র সত্যেন্দ্রনাথের জ্যেষ্ঠ পুত্র। দিনেন্দ্রনাথ (১৮৮২-১৯৩৫) দেবেন্দ্রনাথের জ্যেষ্ঠ পুত্র দ্বিপেন্দ্রনাথের একমাত্র পুত্র।
শান্তিনিকেতনে বেড়াতে এসেছেন কয়েকজন সাহিত্যিক। তাঁদের দেখে ক্ষিতীশ রায়কে বলেন, দেখো ক্ষিতীশ, এঁরা সাহিত্যিক—ভারি সেন্টিমেন্টাল, আদর-যত্নের যেন ত্রুটি না হয়!
তারপর সকলের দিকে চেয়ে বলেন, ঘুম হয়েছিল তো তোমাদের? তোমরা এসেছো এক খারাপ সময়। গরমে কষ্ট হবে, তবে সে দোষ আমার নয়, আকাশের।
সাহিত্যিকদের একজন বলেন, আর কোনও অসুবিধা হয় নি, তবে রাতে কোকিলের ডাকে ঘুম হয় নি।
রবীন্দ্রনাথ বলেন, কোকিলের ডাকে কি কবিদের ঘুম হয় বাপু? আমাদের এখন মাঝে-মাঝে ঘুম হয় না বটে, তবে কোকিলের ডাকে নয়, মশার কামড়ে।
শান্তিনিকেতনে তখন খুব মশা। মাঝে-মাঝে একটা মশা মারার তেল হাতে পায়ে মাখতেন রবীন্দ্রনাথ। কেউ জিজ্ঞাসু চোখে তাকালে হেসে বলতেন, ভেবো না যেন বুড়ো বয়সে বাত ধরেছে। শান্তিনিকেতনেও মশারা খুব নম্র, সব সময়েই পদসেবা করছে, তাই তাদের আপ্যায়নে এই আয়োজন!
রবীন্দ্র বিশেষজ্ঞ, অনুবাদক ও অধ্যাপক ক্ষিতীশ রায় (১৯১১-১৯৯৫) শান্তিনিকেতনের শিক্ষাভবনে ইংরেজির লেকচারার হিসেবে যোগ দেন ১৯৩৪ সালে। ১৯৩৫ সাল থেকে ‘বিশ্বভারতী কোয়ার্টারলি’র সম্পাদক কৃষ্ণ কৃপালনি’র সহযোগী ছিলেন। পরে সম্পাদক হন পত্রিকাটির। ‘বিশ্বভারতী নিউজ’-এর সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। এছাড়া ছিলেন রবীন্দ্রভবনের প্রধান রূপকার, টেগোর মিউজিয়ামের কিউরেটর এবং বিশ্বভারতী টেক্সট বুক কমিটির সদস্য।
রবীন্দ্রজীবনকথা’র লেখক প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় (১৮৯২-১৯৮৫) ছিলেন শান্তিনিকেতনের গ্রন্থাধ্যক্ষ। এক বিকালে এক গোছা বই নিয়ে এক মনে যাচ্ছিলেন বারান্দা দিয়ে। রবীন্দ্রনাথ বসেছিলেন বারান্দার এক কোণে। তাঁকে দেখে সজোরে ডেকে ওঠেন তিনি, ও বৈবাহিক শোনো শোনো!
প্রভাতকুমারকে তাঁর বন্ধুরা এক সম্পর্কের সূত্র ধরে রসিকতা করে মাঝে-মাঝে সম্বোধন করতেন বৈবাহিক। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ বলেন নি কখনও। তাই তাঁর মুখে বৈবাহিক ডাক শুনে অবাক হয়ে প্রভাতকুমার জিজ্ঞেস করেন, গুরুদেব, আপনি আমায় বলছেন কেন?
রবীন্দ্রনাথ হেসে বলেন, আরে না-না, সে বৈবাহিক নয়। তোমায় আমি ডাকছি ‘বই-বাহিক’ বলে!
বাল্যকালে মৈত্রেয়ী দেবী শান্তিনিকেতনে স্বরচিত একটা কবিতার খাতা নিয়ে দেখিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথকে। তখন দু’-একটা কবিতা পড়ে তাঁকে ছন্দের প্রাথমিক কয়েকটি ভুল দেখিয়ে দেন তিনি। অন্ত্যমিল যে যুগ্ম হওয়া চাই সে কথাও বলেন, যেমন তিন দুই, তিন দুই, তিন দুই, চার-এর মধ্যে হঠাত্ যদি দুই দুই ঢুকিয়ে দাও তো ছন্দপতন হয়ে যাবে।
তারপর তাঁকে নিয়ে লেখা একটি কবিতা পড়ে রবীন্দ্রনাথ বলেন, ‘কবিবর’ ইত্যাদি দুই দুই হয়ে যাচ্ছে। এক কাজ করো। আমায় শুধু ‘কবি’ বললেই যথেষ্ট হবে—‘বর’ না হয় না-ই হলুম!
তারপর মুচকি হেসে বলেন, বরকে বরবাদ করে দাও। আমার ওপর কবিতা লেখা তো সহজ। রবীন্দ্রের সঙ্গে কবীন্দ্র মিলিয়ে দিলেই হবে!
মৈত্রেয়ী দেবী (১৯১৪-১৯৯০) রবীন্দ্রনাথের নিকটচারিণী, ভাবশিষ্যা, রবীন্দ্রজীবনের অন্তরঙ্গ স্মৃতিকথাকার, সুলেখিকা ও সমাজসেবিকা হিসেবে তিনি সুপরিচিত। তাঁর রবীন্দ্র বিষয়ক বইগুলোর মধ্যে রয়েছে—মংপুতে রবীন্দ্রনাথ (১৯৪৩); পঁচিশে বৈশাখ (সম্পাদনা, ১৯৪৬); কবি সার্বভৌম (১৯৫১); জবষরমরড়হ ড়ভ ঞধমড়ত্ব (১৯৫৪); বিশ্বসভায় রবীন্দ্রনাথ (১৯৬১); জধনরহফত্ধহধঃয, ঃযব সধহ নবযরহফ যরং ঢ়ড়বঃত্ু (১৯৭৩); হিন্দু-মুসলমান ও রবীন্দ্রনাথ (১৯৭৪); রবীন্দ্রনাথ : গৃহে ও বিশ্বে।
শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথ মাঝে-মাঝে বসে থাকতেন বারান্দায়। প্রায়ই এক পাগল তাঁর কাছে এসে দুটো পয়সা নিয়ে যেতো গাঁজা খাওয়ার নাম করে। রবীন্দ্রনাথ পাগলদের খুব পছন্দ করতেন, তাদের প্রশ্রয়ও দিতেন।
এক দুপুরে সেই পাগলটা এসে একেবারে হাজির রবীন্দ্রনাথের সামনে। এসেই আটখানা হয়ে আহ্লাদে। বলে, না-না, আজ গাঁজা খাওয়ার পয়সা চাইতে আসি নি আপনার কাছে, আজ এসেছি একটা সুখবর দিতে।
কি ব্যাপার? পাগলের মুখে সুখবর শুনতে উন্মুখ হয়ে ওঠেন রবীন্দ্রনাথ।
পাগল এক গাল হেসে বলে, আপনার ছেলেরা আজ বেশ বড় গোছের ডিগ্রি দিয়েছে আমাকে—হ্যাঁ, আপনার চেয়েও বড় ডিগ্রি।
তাই নাকি? তা ডিগ্রিটা কি?
গ.অ.উ.—কেমন, আপনার চেয়ে বড় ডিগ্রি নয়? হ্যাঁ মশাই, আপনার ছেলেদের তারিফ করতে হয় এর জন্যে—আমি তো রীতিমতো গর্বিত!
তা তো বটেই। বেশ ভাল আর আমার চেয়েও বড় ডিগ্রি আপনি পেয়েছেন—তা আমাকে স্বীকার করতেও হবে। তবে এবার থেকে গাঁজা খাওয়া ছেড়ে দিন—অত বড় ডিগ্রি পেয়েছেন—আর গাঁজা খাওয়া ভাল মানায় না।
তা দিলুম... এই আজ থেকেই—
বলেই ছুট।
তবে পাগলটা কিন্তু এরপর থেকে গাঁজা খাওয়া ছেড়ে দিয়েছিল একদম।
রবীন্দ্রনাথ যে চিকিত্সায় উত্সাহী, তা জানতেন অনেকে। সুযোগ পেলেই হাতের কাছের রোগীকে হোমিওপ্যাথি-বায়োকেমিক ওষুধ দিয়ে চিকিত্সা করতেন তিনি। ডাক্তারি বই পড়া ছিল তাঁর নেশা। নিয়মিত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতেন খাদ্যাভ্যাস নিয়ে, আর সঙ্গী-সহযোগীদের বলতেন তা অনুসরণ করতে। কিছু দিন সেদ্ধ তরিতরকারি, সবুজ শাক-সবজি খেয়ে নিজেই অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। এ অবস্থায় পরীক্ষা বন্ধ রাখেন, কিন্তু পরাজয় স্বীকার করেন না কিছুতেই। বারবার শুধু বলেন, এই খাদ্যনীতিতে কোনও ত্রুটি নেই, কেবল আমার স্বাস্থ্যই আমার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। একথা তোমরা স্মরণ রেখো—আমি শুধু কবি নই, আমি কবিরাজ-ও।
কবি অক্ষয়চন্দ্র চৌধুরী ছিলেন জ্যোতিরিন্দ্রনাথের সহপাঠী বন্ধু। ওই সূত্রে ঠাকুরবাড়ি আসা-যাওয়ার ফলে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গেও বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছিল তাঁর। সে সময় ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে খুব আলোচনা করতেন তিনি। একদিন রবীন্দ্রনাথ গোঁফ-দাড়ি পরে পার্শী সেজে অক্ষয়চন্দ্রের কাছে এসে বলেন, আমি বোম্বাই (মুম্বই) থেকে এসেছি। আপনার সঙ্গে ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে আলোচনা করতে চাই।
অক্ষয়চন্দ্র রাজি হন আলোচনা করতে। রবীন্দ্রনাথের কণ্ঠস্বরও ধরতে পারেন না তিনি। বায়রন, শেলী, কীটস নিয়ে জোর তর্ক চলে দু’জনের মধ্যে। অন্যেরা বসে আমোদ উপভোগ করেন খুব। এক সময় স্যর তারকনাথ পালিত এসে উপস্থিত। তিনি এসেই “এ কি—রবি?” বলেই তাঁর মাথায় মারেন এক চাপড়। অমনই খসে পড়ে রবীন্দ্রনাথের নকল দাড়ি-গোঁফ। অক্ষয়চন্দ্র বিস্ময়ে হতবাক হয়ে তাকিয়ে থাকেন ফ্যাল-ফ্যাল করে। অন্য বন্ধুরা কেউ পারেন না হাসি চেপে রাখতে। সেদিন ছিল পয়লা এপ্রিল—অল ফুল্স্ ডে!
অক্ষয়চন্দ্র চৌধুরী (১৮৭৬-১৯৬২) রচিত ও প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ: উদাসিনী (১৮৭৪), সাগরসঙ্গমে (১৮৮১), ভারতগাথা (১৮৯৫)। কিশোর রবীন্দ্রনাথকে তিনি উত্সাহিত করেছিলেন সাহিত্যচর্চায়। রবীন্দ্রনাথের ‘বাল্মীকি-প্রতিভা’ গীতিনাট্যে তাঁর লেখা গান আছে কয়েকটি।
স্যর তারকনাথ পালিত (১৮৩১-১৯১৪) ছিলেন সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের সহপাঠী। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়কে তিনি ১৫ লাখ টাকা দান করেছিলেন রসায়ন ও পদার্থ-বিজ্ঞান শিক্ষার জন্য। তাঁর ও স্যর রাসবিহারী ঘোষ (১৮৪৫-১৯২১)-এর অর্থে প্রতিষ্ঠিত হয় কলকাতা সায়েন্স কলেজ।
জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৪৯-১৯২৫) দেবেন্দ্রনাথের ষষ্ঠ সন্তান, পঞ্চম পুত্র। রবীন্দ্রনাথের ‘নতুন দাদা’ তিনি।
এক গানের আসর। গান গাইছেন বিখ্যাত গায়ক গোপেশ্বর বন্দ্যোপাধ্যায় (১৮৮০-১৯৬২)। সেই আসরে উপস্থিত রবীন্দ্রনাথ। গোপেশ্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের গান হয়ে যাওয়ার পর সবাই গান গাইবার অনুরোধ জানিয়ে চেপে ধরেন রবীন্দ্রনাথকে। সে অনুরোধ শুনে রবীন্দ্রনাথ হেসে বলেন, গোঁফেশ্বরের পর এবার কি দাড়ীশ্বরের পালা?
এক বন্ধুর বাড়িতে নিমন্ত্রণে গিয়েছেন রবীন্দ্রনাথ। তাঁর আগমনে খুব ব্যস্ত হয়ে পড়েন গৃহস্বামী। এত বড় মানী লোক পা দিয়েছেন বাড়িতে, কি করে অভ্যর্থনা জানাবেন! যথাযোগ্য সমাদর করে একখানি সুন্দর চেয়ার এগিয়ে দিলেন বসার জন্য। চেয়ারটি দেখে বন্ধুকে জিজ্ঞেস করেন রবীন্দ্রনাথ, চেয়ারটি সজীব নয় তো?
এই গুরুগম্ভীর প্রশ্নে বিস্মিত হন ভদ্রলোক। চেয়ার তো জড় পদার্থ, সজীব হবে কিরূপে! তিনি ফ্যাল-ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকেন রবীন্দ্রনাথের দিকে।
বন্ধুর অবস্থা দেখে তিনি হাসতে-হাসতে বলেন, তোমার ভাবনার কিছু নেই। আমি বলছি চেয়ারটি স-জীব অর্থাত্ ওতে ছারপোকা নেই তো?
এতক্ষণে ধাতে এলেন বন্ধুটি।
বঙ্গভঙ্গের আন্দোলন তখন তুঙ্গে। এ আন্দোলনের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় নেতা ছিলেন রবীন্দ্রনাথ। নানা জায়গায় সভা-সমিতিতে যোগ দিতেন প্রায় প্রতি দিনই।
এমনই এক দিনে নাটোরের মহারাজা জগদিন্দ্রনাথ রায় (১৮৬৮-১৯২৬)-এর মেয়ের বিয়ে। মহারাজা অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বন্ধু রবীন্দ্রনাথের। তাই সকাল-সকাল আসতে বলেছিলেন তাঁকে। বিয়ের দিনে সন্ধ্যায় অতিথিদের সংবর্ধনা জানাচ্ছেন মহারাজা, ওই সময় হন্তদন্ত হয়ে সেখানে উপস্থিত হন রবীন্দ্রনাথ।
তাঁকে দেখে অনুযোগের সুরে মহারাজা বলেন, আমার কন্যাদায়, কোথায় আপনি সকাল-সকাল আসবেন—তা না এলেন এত দেরি করে!
রবীন্দ্রনাথ বলেন, মহারাজ, আমারও মাতৃদায় (বঙ্গভঙ্গ)। দু’জায়গায় সভা করে এলুম।
রবীন্দ্রনাথ অসুস্থ। চিকিত্সার আয়োজনে ত্রুটি নেই কোনও। বড়-বড় ডাক্তার আসছেন, দেখছেন। শেষকালে রবীন্দ্রনাথ বলেন, আমাকে নিয়ে বেজায় বিপদে পড়েছে ডাক্তাররা। হার্ট দেখে, লাংস দেখে, কোথাও কোনও দোষ খুঁজে পায় না... ওদের ভারি মন খুব খারাপ।
নির্মলকুমারী মহলানবিশ কাছেই ছিলেন। তিনি জিজ্ঞেস করেন, মন খারাপ হবে কেন? এতে তো খুশি হওয়ারই কথা!
রবীন্দ্রনাথ উত্তর দেন, তুমি কি বোঝো না? রোগী আছে, রোগ নেই। ওরা চিকিত্সা করবে কার? এতে ওদের মন খারাপ হবে না?
রানী নামে অধিক পরিচিত নির্মলকুমারী (১৯০০-১৯৮১) রবীন্দ্রনাথের কর্মসচিব (১৯২১-১৯৩১) প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশ (১৮৯৩-১৯৭২)-এর স্ত্রী।
ভৃত্য বনমালীর খোঁজখবর নেন রবীন্দ্রনাথ— বনমালী, খাওয়া-দাওয়া চলছে কেমন?
বনমালী উত্তর দেয়—আজ্ঞে, তা ভালই চলছে। দিদিমণি আবার আমায় দুধ খাওয়াচ্ছেন।
রবীন্দ্রনাথ বলেন, দুধ খাওয়াচ্ছেন কেন? তার চেয়ে দুধ মাখালেই পারতেন! খেয়ে তো রঙের বেশি উন্নতি হচ্ছে না!
রবীন্দ্রনাথের গৃহে ‘বিচিত্রা সভা’র অধিবেশন। কিছুদিন ধরে সভ্যদের বাইরে রাখা জুতো চুরি যাচ্ছিল।
শরত্চন্দ্র উপস্থিত হন সভায়। কিন্তু চুরি যাওয়ার ভয়ে জুতোটা চুপি-চুপি একটা খবরের কাগজে মুড়ে বগলে করে রবীন্দ্রনাথের কাছে গিয়ে বসেন তিনি।
শরত্চন্দ্রের ব্যাপারটা দৃষ্টি এড়ায় নি অনেকের। তাঁদের একজন গোপনে তা জানিয়ে দেন রবীন্দ্রনাথকে।
রবীন্দ্রনাথ তখন হাসতে-হাসতে জিজ্ঞেস করেন, ও শরত্, তোমার বগলে ওটা কি?
শরত্চন্দ্র আমতা-আমতা করেন।
রবীন্দ্রনাথ তখন জানতে চান, ও ‘পাদুকাপুরাণ’ বুঝি?
চারদিকে জাগে চাপা হাসির কলরব।
সেকালের শীর্ষস্থানীয় মাসিক পত্রিকা ‘বিচিত্রা’র সম্পাদক কথাসাহিত্যিক উপেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায় (১৮৮১-১৯৬০) ছিলেন শরত্চন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৮৭৬-১৯৩৮)-এর মামা। পত্রিকাটির নিয়মিত লেখক, শুভানুধ্যায়ী ও সংশ্লিষ্টদের নিয়ে গড়ে উঠেছিল ‘বিচিত্রা সভা’।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন