বৃহস্পতিবার, ২৮ জুন, ২০১২

দেশের সম্পদ বিদেশে

দেশের অর্থ-সম্পদ বিদেশে পাচারের কথা প্রায়ই শুনি। মানি লন্ডারিং-এর অভিযোগ অনেকের বিরুদ্ধে। রাজনীতিক, ব্যবসায়ী, আমলা, চোরাকারবারিদের অনেকে বিদেশে সম্পদের পাহাড় গড়ছে - এমন কথা এখন নিয়মিত আইটেম হয়ে পড়েছে বক্তৃতা-বিবৃতির। উচ্চারিত হচ্ছে কত জনের নাম। ১০ বছর আগে প্রণীত হয়েছে প্রিভেনশন অভ মানি লন্ডারিং অ্যাক্ট, ২০০২ (অ্যাক্ট নং ৭ অভ ২০১২)। এ অ্যাক্টের অধীনে বাংলাদেশ ব্যাঙ্ক এ পর্যন্ত জারি করেছে ২৬টি সারকুলার। এর মাধ্যমে ব্যাঙ্কিং সেক্টরে নিশ্চয়ই চলছে কড়াকড়ি প্রতিরোধমূলক তৎপরতা, কিন্তু হুন্ডি বন্ধ হয় নি বলেই শোনা যায়। সেই ১৯৯৬ সালে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আই এম এফ) অনুমান করেছিল, বিশ্ব অর্থনীতির ২ থেকে ৫ ভাগ অর্থ লন্ডার করা। তবে আন্তঃসরকার সংগঠন ফিনান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্স অন মানি লন্ডারিং  (এফ এ টি এফ) বলেছে, এই অর্থের হিসাব করা সম্ভব নয়। এজন্য এ সংক্রান্ত কোন অনুমান বা ধারণা তাঁরা প্রকাশ করেন নি আর।
    অর্থ-সম্পদের অবৈধ পাচার বা চালান ঠেকানোর পাশাপাশি চলছে সে সব উদ্ধারের নানা তৎপরতা। বিদেশে যাঁরা আলিশান বাড়ি বানিয়ে বা কিনে, রমরমা ব্যবসা বাগিয়ে লেটেস্ট মডেলের আউডি বা মাসেরাতি হাঁকিয়ে বেড়ান তাঁদের সুলুক-সন্ধান নিয়ে পাচার করা সম্পদ উদ্ধার করে দেশে ফিরিয়ে আনার ঘটনা ঘটছে বিভিন্ন দেশে। কারণ দুর্নীতিবিরোধী সংগ্রামে আন্তর্জাতিক পূর্বিতা যে লুণ্ঠিত সম্পদ উদ্ধার তা সুস্পষ্টরূপে উল্লেখ করা হয়েছে দুর্নীতিবিরোধী জাতিসংঘ সম্মেলন (২০০৩)-এর পঞ্চম অধ্যায়ে। ওই সম্মেলনেই গঠিত হয় ইউনাইটেড নেশনস্‌ কনভেনশন এগেনস্ট করাপশন (ইউ এন সি এ সি)। এটি কার্যকর হয় ২০০৫ সালের ১৪ই ডিসেম্বর থেকে। এ পর্যন্ত বাংলাদেশ সহ ১৪০টি দেশ স্বাক্ষর করেছে এতে। সম্পদ উদ্ধারে নিয়োজিত আছে অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংগঠনের মধ্যে রয়েছে - ইউনাইটেড নেশনস্‌ অফিস অন ড্রাগস অ্যান্ড ক্রাইম (ইউ এন ও ডি সি), স্টোলেন অ্যাসেট রিকভারি ইনিশিয়েটিভ (বিশ্ব ব্যাঙ্ক) (এসটি এ আর), ইনটারন্যাশনাল সেনটার ফর অ্যাসেট রিকভারি (আই সি এ আর), দি ইনটারন্যাশনাল এসোসিয়েশন ফর অ্যাসেট রিকভারি (আই এ এ আর), অরগানাইজেশন ফর ইকনমিক কোঅপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (ও ই সি ডি), ট্রান্সপারেন্সি ইনটারন্যাশনাল (টি আই), ফিনান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্স (এফ এ টি এফ), ইউ৪ অ্যানটি-করাপশন রিসোর্স সেনটার (ইই৪) প্রভৃতি। এছাড়া আঞ্চলিক পর্যায়ে আইন, বিচার ও সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিভাগের রয়েছে চোরাই সম্পদ উদ্ধারের উদ্যোগ।
    উল্লিখিত সংস্থা-সংগঠনের উদ্যোগের ফলেই নাইজেরিয়ার সামরিক একনায়ক জেনারেল সানি আবাচা (১৯৯৩-৯৮)-র লুণ্ঠিত ৬০ কোটি ডলার বাজেয়াপ্ত করে সুইজারল্যান্ড। পরে সে অর্থ উন্নয়ন-কাজে ব্যয় হয় বিশ্ব ব্যাঙ্কের তদারকে। এছাড়া সুইজারল্যান্ড বাজেয়াপ্ত করেছে জায়ারে’র সাবেক প্রেসিডেন্ট  মোবুতো সেসে সেকো (১৯৬৫-১৯৯৭) ও কেনিয়া’র সাবেক প্রেসিডেন্ট দানিয়েল আরাপ মোই-এর বিপুল অর্থ। ফিলিপাইনের সাবেক প্রেসিডেন্ট ফারদিনান্দ মারকোস (১৯৬৫-৮৬)-এর বহু সম্পদ ফিরে পেয়েছে দেশ। পেরু’র সাবেক প্রেসিডেন্ট আলবেরতো ফুজিমোরি (১৯৯০-২০০০)-র ডান হাত ভ্লাদিমিরো লেনিন মনতেসিনোস তোরেস-এর পাচারকৃত অর্থ থেকে ১৭ কোটি ৪০ লাখ ডলার উদ্ধার করেছে আইসিআর। হেইতি’র সাবেক প্রেসিডেন্ট জাঁ-ক্লদ ‘বেবি ডক’ দুভালিয়ার (১৯৭১-১৯৮৬), ইউক্রেন-এর সাবেক প্রধানমন্ত্রী পাভলো লাজারেঙ্কো (১৯৯৬-৯৭), নাইজেরিয়া’র প্ল্যাটো স্টেট-এর সাবেক গভর্নর জোশুয়া দারিয়ে (১৯৯৯-২০০৭) ও বায়েলসা স্টেট-এর সাবেক গভর্নর দিয়েপ্রিয়ে আলামিয়েসেইগা (১৯৯৯-২০০৫), ইন্দোনেশিয়ার ব্যাঙ্কার হেনদ্রা রাহারদজা, চীনের মাকাউ-এর পরিবহন ও পূর্ত বিভাগের প্রথম সচিব আও মান লোং (১৯৯৯-২০০৬) প্রমুখ কর্তৃক অপহৃত সম্পদ উদ্ধার করা হয়েছে অনেকখানি। বিভিন্ন মেয়াদের কারাদ-ও হয়েছে ক’জনের্‌
অপহরণ ও উদ্ধার সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য এখানে তুলে ধরার উদ্দেশ্য একটাই - যাঁরা আমাদের দেশের অর্থ-সম্পদ বিদেশে পাচার করেছেন, করছেন এবং করবেন বলে ভাবছেন - সেই লুটেরাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা।

sazzadqadir@rediffmail.com

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন