রবিবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০১১

বিপদ বানানো বানান

বানান নিয়ে আমি বিপদে পড়ি প্রায় সব সময়েই। লেখালেখিতে যেমন, পথেঘাটেও তেমন। আর তা ঘটতে পারে যে কোনও বিষয় নিয়ে আলোচনায়। রাজনীতি হোক, আর খুনোখুনি হোক।
অস্ত্র সহ  ধরা পড়েছে পাঁচ দুর্বৃত্ত। পুলিশ উদ্ধার করেছে গুলি, পিস্তল, ম্যাগাজিন...। যেই ‘ম্যাগাজিন’ বলেছি  অমনি তড়বড় করে ওঠে একজন, উঁহুঁ... ম্যাগজিন। যত বলি ‘ম্যাগাজিন’ তত বলে ‘ম্যাগজিন’। বলে, সাময়িকী পত্রিকা ‘ম্যাগাজিন’... রাইফেল বা বন্দুকে কারতুজ রাখার কুঠুরি ‘ম্যাগজিন’। জেদাজেদির পর্যায়ে চলে যায় ব্যাপারটা। ডিকশনারি, এনসাইক্লোপিডিয়া, ওয়ার্ড ওয়েব... সব ঘেঁটে ঘাট মেরে যায় সবাই। শেষে যুক্তি দেখায়, ডিকশনারিতে যা-ই থাকুক... পুলিশেরা ম্যাগজিন বলে। ওটাই বোঝে সবাই। ওটাই চালু। এই সূত্রে জানা যায়, পুলিশের জনসংযোগ বিভাগ থেকে যে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি আসে তাতে প্রায়ই ‘ম্যাগজিন’ উল্লেখ থাকে... সেটাই হয়েছে কোনও-কোনও পত্রিকায় বছরের পর বছর ধরে ওই  ভুল বানান লেখার কারণ। যাঁরা ওই বিজ্ঞপ্তি কখনও দেখেছেন তাঁরা জানেন কেমন তার ভাষা আর বানান!
এ প্রসঙ্গে মনে পড়ে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত একজন পরিচালকের কথা। লেখালেখিতে বেশ উৎসাহ ছিল তাঁর। প্রায়ই লিখতেন ‘বিচিত্রা’য়, দৈনিক বাংলা’র ‘ছায়ামঞ্চ’ বিভাগে। বিদেশী চলচ্চিত্র ও পরিচালকদের কথা বলতেন সব সময়। সে সব কথায় চলচ্চিত্রিক পরিভাষা ব্যবহার করতেন খুব বেশি। লিখতেনও ও রকম ভাষায়। তাঁর প্রিয় পরিচালক ছিলেন ফ্রাঁসোয়া ত্রুফো (১৯৩২-৮৪) আর প্রিয় ছবি ছিল “দ্য ৪০০ ব্ল্লোস”, “জুলে অ্যান্ড জিম”, “ফারেনহাইট ৪৫১”, “ডে ফর নাইট”, “দ্য স্টোরি অভ আদেল এইচ”, “দ্য ম্যান হু লাভড্‌ উইমেন”, “দ্য উওম্যান নেক্সট ডোর”...। তবে তিনি ‘ত্রুফো’ (ঞৎঁভভধঁঃ)-কে লিখতেন ‘ক্রুফো’। আমি সংশোধন করে ছেপে দিতাম লেখা, যেমন করে থাকি অন্য অনেকের লেখার বেলায়। কিছু দিন পরে তিনি একদিন অফিসে এসে চেপে ধরেন আমাকে। বলেন, আপনি এত বড় একটা ভুল করেন?
জানতে চাই, কি সেই ভুল। তিনি উত্তেজিত হয়ে যান, আপনি ক্রুফো-কে ত্রুফো করে দিচ্ছেন সব সময়? এজন্য লজ্জা পেতে হচ্ছে আমাকে!
আমি বলি, ত্রুফো না লিখলে তো সম্পাদক কবি শামসুর রাহমান আমাকে কারণ দর্শাও নোটিস দেবেন!
কেন? কেন?
কারণ যাঁকে আপনি ক্রুফো লেখেন... তিনি আসলে ত্রুফো।
কিন' আমি তো ক্রুফো-ই লিখি!
কেন লেখেন?
কলকাতার পত্রিকায় এ রকম লেখে।
কিছু দিন পর কলকাতার এক লিটল ম্যাগাজিন নিয়ে আসেন তিনি। বলেন, দেখুন বানানটা আসলে ক্রুফো!
এর পর ছাপার ভুল ব্যাপারটা তাঁকে বোঝাতে প্রায় এক ঘণ্টা লেগে যায় আমার।
সেই থেকে আমি ধন্দে আছি কতিপয় ইতিহাসবিদ সম্পর্কে। তাঁরা দু’ হাতে প্রচুর লেখেন বাংলাদেশের ইতিহাস, ঢাকার ইতিহাস সম্পর্কে। এত লিখতে যত গবেষণা প্রয়োজন, অনুসন্ধান প্রয়োজন... তত গবেষণা বা অনুসন্ধানের সময় তাঁরা পান কখন এবং কিভাবে? এত লিখতেও তো অনেক সময় লাগে! তাছাড়া এ দেশের ইতিহাস লিখতে গেলে সংস্কৃত, আরবি, ফারসি ও ইংরেজি জানতে হবে ভালভাবে। কারণ ইতিহাসের উপাদান হিসেবে যত লেখ, লিপি, বৃত্তান্ত, বিবরণী, দলিল প্রভৃতি আছে সেগুলো সব ওই সব ভাষার কোনও না কোনওটিতে লেখা। তাহলে যাঁরা ওই চারটি ভাষার প্রথম তিনটি জানেন না এবং চতুর্থটিতে দুর্বল ... তাঁরা কিভাবে ইতিহাসবিদ হয়ে যাচ্ছেন? নিশ্চয়ই নির্ভর করছেন ইংরেজি বা বাংলা অনুবাদের ওপর। যদি ওই অনুবাদে ভুল থাকে, ছাপার ভুল থাকে? তখন তো ওই ‘ক্রুফো’!
পথেঘাটের কথা বলছিলাম। সেদিন একজন জিজ্ঞেস করেন,  গ্রিনিচ মান সময়ের সঙ্গে আমাদের ব্যবধান কত?
আমি বাধা দিলাম, গ্রিনিচ মান নয় গ্রিনিচ মিন...
তিনি জানান, ইংরেজিতে গ্রিনিচ মিন... কিন' বাংলায় গ্রিনিচ মান।
এখানে মিন মানে মধ্যবর্তী বা মধ্য। মধ্যবর্তী সৌর সময়... মিন সোলার টাইম।
কিন' বিভিন্ন পত্রিকার দোহাই দিয়ে তিনি জানান, ওঁরা মান-ই লিখছেন।
পরে তাঁকে অভিধান দেখাই। তিনি বলেন, অভিধান দেখাবেন না। অভিধানে অনেক ভুল। তাছাড়া অভিধান আপনারা নিজেরাই যখন মানেন না, তখন আমাদের কেন মানতে বলেন?
আমরা মানি না?
না। এই দেখুন... অভিধানে কোথাও নেই ‘ওঠ’। আছে ‘উঠ’। কিন' আপনারা “সূর্য উঠে” না লিখে লিখছেন “সূর্য ওঠে”।
অভিধানে তে অনেক কিছু নেই। কিন' আমাদের লিখতে হয়। ‘ওপর’ নেই। কিন' লিখতে হয় ‘মুখের ওপর কথা’!
এই যে ‘ম্যাগজিন’, ‘ক্রুফো’ বা ‘গ্রিনিচ মান’ - এঁদের জন্য এখনও ইংরেজি ড়ভ  বাংলায় ‘অফ’ বা ‘অব’ হয়ে আছে, শুদ্ধ উচ্চারণের ‘অভ’ হতে পারে নি। একই ভাবে ইংরেজি ধহফ বাংলায় ‘এণ্ড’ বা ‘এন্ড’ হয়ে আছে, ‘অ্যান্ড’ হতে পারে নি। ‘আশিস্‌’ না লিখে ‘আশীষ’ লেখেন, ‘দিলীপ’ না লিখে ‘দীলিপ’ লেখেন, জেনেশুনে ‘পৃথ্বীশ’ না লিখে ‘পৃথ্বিশ’ লেখেন - এমন লোকের সংখ্যা এখন অনেক। জিজ্ঞেস করলে তাঁরা বলেন, আমি তো এ রকমই লিখি।
অনেকে আছেন যাঁরা ভুল বানান লেখার পক্ষে যুক্তিও দেখান। বলেন, কম্যুনিকেট করাটাই আসল। আমি যদি পাঠককে বোঝাতে পারি তাহলে অসুবিধা কোথায়?
এই ভদ্রলোকের এক লেখার প্রথম পাঁচ বাক্যে ছিল ১১টি ভুল। তাঁকে বলেছিলাম বানানের ব্যাপারে সচেতন হতে, কনফিউশন হলে ডিকশনারি দেখতে। তিনি অম্লান বদনে উত্তর দিয়েছিলেন, আমার কোনও কনফিউশন হয় না।
রবিবারকে অনেকে রোববার লেখেন। কিন' ‘রোব ও সোমবার’ লেখেন না। ‘আজও, আরও, আবারও, এখনও, কখনও, কোনও’ না লিখে অনেকে লেখেন ‘আজো আরো আবারো এখনো কখনো কোনো’। এঁরা অনেকেই ‘আজো গিয়েছি কালও যাবো’ লেখেন, কিন' ‘আজো গিয়েছি কালো যাবো’ লেখেন না। ‘জানালা’কে ‘জানলা’ এবং ‘দরজা’কে ‘দরোজা’ লেখার উদাহরণ মেলে অজস্র। এগুলো চালু হয়ে গেছে ব্যাপকভাবে। এর কোনটা ভুল তা নির্ণয় করা কঠিন হয়ে পড়ছে ক্রমশ। ‘হোতা’ শব্দটির মূল অর্থ গুণবাচক হলেও এখন এর প্রয়োগ চলছে হীন অর্থে। নায়ক শব্দটিও গুণবাচক। তবুও ‘চার খুনের নায়ক’ লেখেন অনেকে, ‘চার খুনের হোতা’ও লেখেন কেউ-কেউ। ইদানীংকার নানা রকম দখল অভিযানের কারণে ‘দখল’ কথাটি ব্যবহৃত হচ্ছে ‘অবৈধ অধিকার’ অর্থে। আর ‘বেদখল’-এর অর্থ দাঁড়াচ্ছে ‘অবৈধ অধিকারমুক্ত’। ‘ইত্যাদি’ ও ‘প্রভৃতি’তে কোনও অর্থগত পার্থক্য না থাকলেও লোকের মুখে-মুখে ‘ইত্যাদি’র সঙ্গে মিশে গেছে কিছু তুচ্ছতা। তাই লেখা হয় ‘মল মূত্র কফ কাশি ইত্যাদি’, কিন' ‘দুধ ঘি ছানা মাখন প্রভৃতি’। মানুষের বেলায় ‘প্রভৃতি’ লেখেন অনেকে, কিন' ‘প্রমুখ’ই তো লেখার কথা। যেমন, ‘বাবর, হুমায়ুন, আকবর প্রমুখ’। কিন' কারও যদি কোনও রকম কনফিউশন না হয় তখন তো আর কিছু থাকে না বলার।
    বিপদের কথা বলছিলাম, আমার বিপদের কারণ অল্প বিদ্যা ভয়ঙ্করী... কথায়-কথায় ডিকশনারি! কিন' হাতে পাঁজি মঙ্গলবার তো চলে না! এই দোটানায় স্কুল-জীবনে আমাদের সম্বল ছিল এক ও অদ্বিতীয় এ টি দেবের ডিকশনারি। তবে কিভাবে-কিভাবে আমি পেয়ে যাই রাজশেখর বসু’র “চলন্তিকা”। আর জানতে পারি “অধীনস' আয়ত্তাধীন আয়ত্ত্ব আশীষ উচিৎ উৎকর্ষতা একত্রিত ঐক্যতান কেবলমাত্র চলমান পৈত্রিক ফেণ ভদ্রস'তা ভাণ মৌনতা মৌন সৌজন্যতা অনুবাদিত অর্ধাঙ্গিনী আবশ্যকীয় আহরিত ইতিপূর্বে ইতিমধ্যে উপরোক্ত সকাতরে সক্ষম সচল চলৎশক্তি চাকচিক্য নিন্দুক নির্বিরোধী বিতরিত মহারথী মহিমাময় মুহ্যমান শরৎচন্দ্র সম্ভব সৃজন সততা সাবধানী” ইত্যাদি অশুদ্ধ শব্দ। এগুলো ব্যাকরণদুষ্ট, বানানে বা শব্দের গঠনে ভুল। এ সব অশুদ্ধ শব্দের স'লে শুদ্ধ শব্দ হিসেবে আমাদের লেখা উচিত “অধীন আয়ত্ত আয়ত্তি আশিস্‌ উচিত উৎকর্ষ একত্র ঐকতান কেবল চলন্ত পৈতৃক ফেন ভদ্রতা ভান মৌন মৌনী সৌজন্য অনূদিত অর্ধাঙ্গী আবশ্যক আহৃত ইতঃপূর্বে ইতিমধ্যে উপর্যুক্ত কাতরভাবে ক্ষম চল চাকচক্য নিন্দক নির্বিরোধ বিতারিত মহারথ মহিমময় মোহ্যমান শরচ্চন্দ্র সম্ভবপর সর্জন, সৃষ্টি সাধুতা সাবধান” ইত্যাদি। এই একই সূত্রে জানা গেল “আভ্যন্তরীণ ঐক্যমত কৃচ্ছ্রতা  প্রয়োজনীয়তা রহস্যময়তা সপক্ষে সার্বজনীন সুষ্ঠ”র বদলে লেখা উচিত “অভ্যন্তরীণ ঐকমত্য কৃচ্ছ্র, কৃচ্ছ্রসাধন প্রয়োজন রহস্য পক্ষে সর্বজনীন সুষ্ঠু”।
এখান থেকেই বিপদের শুরু আমার। সহপাঠীদের সঙ্গে, তারপর সহকর্মীদের সঙ্গে, তারপর লেখক সাংবাদিক সম্পাদক প্রকাশকদের সঙ্গে প্রথমে তর্ক-বিতর্ক, তারপর বাদবিসংবাদ, ঝগড়াঝাটি, মন কষাকষি, তারপর... বুঝতেই পারছেন!
বিপদের শুরুর সময়টা মনে রাখা দরকার। তখন “সূর্য্য পূর্ব্ব দিকে উদিত হয়... সকলে ধর্ম্ম-কর্ম্ম সাঙ্গ করিয়া কেহ কৃষিকার্য্যে মাঠে যায়... কেহ রেলষ্টেশনে বা ষ্টীমারঘাটে যায়... খ্রীষ্টাব্দ অনুযায়ী তখন ১৯৫৯ বৎসর...”। সেই সময়ে কেন, এখনও অমন শুদ্ধাশুদ্ধি বিচারে তেড়ে আসেন অনেকে। এর কারণও আছে অনেক। ‘শরচ্চন্দ্র’ বানানের সর্বনাশ করে গেছেন শরৎচন্দ্র স্বয়ং। ‘আশিস্‌’কে প্রায় ‘আশীষ’ করে ফেলেছেন আশীষকুমার লোহ, শুভাশীষ, দেবাশীষ অনেকে। [একই ভাবে ‘দিলীপ’কে ‘দীলিপ’ করে ফেলেছেন পরিচালক-প্রযোজক দীলিপ বিশ্বাস; ‘উজ্জ্বল’কে ‘উজ্জল’ করে ফেলেছেন নায়ক-প্রযোজক উজ্জল; ‘আকাঙ্ক্ষা’কে ‘আকাংখা’ বা ‘আকাঙ্খা’ করে ফেলেছেন কবি ফজল শাহাবুদ্দিন, পরিচালক-অভিনেতা সুভাষ দত্ত, লেখক হুমায়ুন আহমেদ।] আর ‘একত্রিত কেবলমাত্র (শুধুমাত্র-ও) চলমান অর্ধাঙ্গিনী আবশ্যকীয় আহরিত সকাতরে সক্ষম সচল চলৎশক্তি (চলচ্ছক্তি-ও) চাকচিক্য নিন্দুক নির্বিরোধী বিতরিত মহারথী মুহ্যমান সৃজন সততা সাবধানী প্রয়োজনীয়তা সপক্ষে” এমন ভাবে প্রতিষ্ঠিত এখন যে এগুলোর শুদ্ধ রূপটাকেই অশুদ্ধ মনে করবেন পাঠকরা। ‘চলমান’ না থাকলে ‘চলমান আন্দোলনের ফসল’ পাবো কোথ্‌ থেকে? (ছোটবেলায় ‘অর্ধাঙ্গিনী’ (১৯৫৫) নামে একটি হিট ছবি দেখেছিলাম মনে পড়ে।)
এছাড়া -িকার ও ঈ-কার,  ু-কার বনাম  ূ-কার, ও বনাম াে-কার,  ৃ-ফলা বনাম + ি্র-ফলার নানা জটঝঞ্ঝাট তো আছেই!
দৃষ্টি আকর্ষণের পরও ‘প্রয়োজনীয়তা’র অর্থ যে আসলে ‘প্রয়োজন’ তা বুঝতেই চান নি এক প্রবীণ সাংবাদিক। তিনি একটি অনুষ্ঠানে রীতিমতো বক্তৃতাই করেছিলেন এ নিয়ে। ‘সৃজন’ কথাটি ভুল জেনেও কি সংগঠনের নাম বদলে দেবেন সৃজনশীল প্রকাশকেরা? ‘সপক্ষে’র ব্যবহার কি ছাড়তে পারবেন মুক্তিযুদ্ধের বা স্বাধীনতার ‘সপক্ষের’ শক্তিরা? (এখানে বলে রাখি, ‘স্বপক্ষের’ বানানও দেখা যায়।) ‘মোহ্যমান’ লিখে ভেংচি খেয়েছি অনেক। যিনি ভেংচি দিয়েছিলেন তিনি ভাষাসৈনিক দাবি করেন নিজেকে। তাঁকে এবং আরও একজনকে দেখে আমার একবার মনে হয়েছিল, ১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে যাঁরা ঢাকা’র কোনও শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে ভর্তি ছিলেন তাঁরা সবাই বোধহয় নিজেদের ভাষাসৈনিক দাবি করেন এভাবে। প্রশ্ন জাগে, বায়ান্ন’র সৈনিকরা  কেন পরে ফেব্রুয়ারি মাসে সংবর্ধনা নেয়া ছাড়া বাংলা ভাষার জন্য কিচ্ছু না করে নিজেকে ভাষাসৈনিক দাবি করেন? বাংলা ভাষা সাহিত্য সংস্কৃতির জন্য কোনও রচনা নেই, গবেষণা নেই, চর্চা নেই, উদ্‌যোগ-আয়োজন নেই, ভূমিকা নেই, অবদান নেই, সাহায্য সহযোগিতা সহায়তা পৃষ্ঠপোষকতা নেই - কেবলই রাশি-রাশি ভারা-ভারা সম্মান-সংবর্ধনা?
আমার সমস্যা হলো, বহুপ্রচলিত ভুলের কাছে অসহায় হয়ে থাকলেও নিজের লেখায় আমি শুদ্ধতা বজায় রাখারই চেষ্টা করি। তাই কখনও ‘মুহ্যমান সপক্ষে সৃজনশীল’ ইত্যাদি লিখি না, ‘মোহ্যমান পক্ষে সৃষ্টিশীল’ ইত্যাদিই লিখি। বঙ্কিমচন্দ্র, রবীন্দ্রনাথ ‘অশ্রুজল’ লিখলেও লিখি না। পারতপক্ষে এড়িয়ে চলি আরও অনেক ভাষাদুষ্টি। এটা বাড়াবাড়ি মনে করেন অনেকে, কিন' আমি মনে করি সকলেরই এমন একটি অধিকার থাকা উচিত। আমি ক্ষুদ্র, সামান্য হলেও স্পর্ধা দেখাই ওই অধিকার সংরক্ষণের। কিন' বিপদ ঘনিয়ে আসে যখন “আগস্ট রিখটার টেরেস্টেরিয়াল” ইত্যাদি না লিখে “অগস্ট রিকটার টিরেসট্রিয়াল” লিখি কিংবা স্বরবর্ণের আগে ‘দি’ এবং ব্যঞ্জনবর্ণের আগে ‘দ্য’ লিখি, তখন ডিকশনারির দোহাইও খাটে না, হুঙ্কার আসে - “এই কচুর ডিকশনারিতে এত ভুল?”

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন