বৃহস্পতিবার, ১২ এপ্রিল, ২০১২

কোটি-কোটি কাঠখরচ

ম্যাটরিকুলেশন, সংক্ষেপে ‘ম্যাটরিক’, পরীক্ষা চালু করেছিল ব্রিটিশ রাজ, এর সমাপ্তি ঘটে ১৯৬২ সালে। আমার মনে আছে, কারণ এ পরীক্ষা আমি দিয়েছিলাম ওই বছর। এর পর, ১৯৬৩ সাল থেকে, চালু হয় সেকেন্ডারি স্কুল সারটিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষা। কেটে গেছে প্রায় ৫০ বছর, কিন্তু এখনও সবার মুখে-মুখে চালু আছে ম্যাটরিক পরীক্ষা, এসএসসি কথাটা আর মুখে আসে না কারও। এ রকম অনেক কিছুই বদলে গেছে, কিন্তু আগেরটাই আঁকড়ে ধরে আছি আমরা। নতুনের প্রতি নেতি আর পুরনোর প্রতি প্রীতি কি আমাদের জাতীয় রক্ষণশীলতারই এক বৈশিষ্ট্য? মারকিন যুক্তরাষ্ট্রের ৩২তম প্রেসিডেন্ট (১৯৩৩-১৯৪৫) ফ্রাঙ্কলিন ডিলানো রুজভেল্ট (১৮৮২-১৯৪৫) বলেছেন, রক্ষণশীলদের পা দু’টো থাকে চমৎকার ? তবে তারা সামনের দিকে চলা শেখে না কখনও। সম্ভবত এ জন্যই ভাষা-ভাষা বলে প্রাণ দিলেও বানান শিখি না, শেখার চেষ্টাও করি না। প্রমিত বানান তো নয়ই। ও সব জানতেও চাই না। ‘ঘুষ’ বানানটি যে ‘ঘুস’ হওয়া উচিত তা বলা হয়েছে অনেক আগে। হিন্দি ‘ঘুস’ থেকে আসা এ অ-তৎসম বিদেশী শব্দের বানান বাংলায় ‘ঘুস’ হওয়ারই কথা। বাংলা একাডেমীর ‘বাংলা বানান-অভিধান’ (পুনর্মুদ্রণ, ১৯৯৫) এ বানানটিই নির্দেশ করেছে, কোনও বিকল্প দেয় নি। তবে ঘুষের সঙ্গে ঘুষাঘুষির একটা ব্যাপার আছে বলেই হয়তো হিন্দি ‘ঘুস’ বাংলায় হয়ে গেছে ‘ঘুষ’। তবে ওই অভিধানে ‘ঘুষি’ ও ‘ঘুষাঘুষি’ও  বিকল্পহীন ‘ঘুসি’ ও ‘ঘুসাঘুসি’। তবে বানান যা-ই হোক ঘুষের অনেক কদর সমাজে। ভাষাতেও। তাই কত নামে ঘুষকে ডাকি আমরা ? উৎকোচ, উপরি, বখশিশ, সেলামি, টু-পাইস, হাতটান, লেনদেন, বাঁ হাতের কামাই, খুশি করা, প্রণোদনা, নজরানা, রিসওয়াত, গোপন পারিতোষিক, গেটিস...! ইংরেজদের কাছেও এর কদর অনেক। ওদের ভাষাতেও অনেক নাম ? " tip, gift, sop, perk, skim, favor, discount, waived fee/ticket, free food, free ad, free trip, free tickets, sweetheart deal, kickback/payback, funding, inflated sale of an object or property, lucrative contract, donation, campaign contribution, fundraiser, sponsorship/backing, higher paying job, stock options, secret commission, or promotion (rise of position/rank)...! "আরও অনেক রকম ঘুষ আছে। মারকিন নাট্যকার থর্নটন ওয়াইল্ডার (১৮৯৭-১৯৭৫) বলেছেন, বিয়েটাও ঘুষ। এ ঘুষ পেলে বাঁদী নিজেকে বেগম ভাবে।
    তবে ঘুষ নিয়ে সামপ্রতিক এক ঘুষাঘুষি জাতীয় ঘটনার খবর জেনেই এত সব কথা বললাম। রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের এপিএস ওমর ফারুক তালুকদারের গাড়ি থেকে ৭০ লাখ টাকা উদ্ধার হয়েছে গাড়িচালক আলী আজমের আকস্মিক তৎপরতায়। গাড়িতে আরও ছিলেন পূর্বাঞ্চলীয় রেলওয়ের জিএম ইউসুফ আলী মৃধা ও রেলওয়ে পুলিশের কমান্ডেন্ট এনামুল হক। ১৬ কোটি টাকার ঘুষ-বাণিজ্যের একটা ভাগ ওই টাকা। ধরা পড়ার পর ঘুষের টাকা ভাগ-বাটোয়ারার নানা কাহিনী ফাঁস হয়ে পড়ছে মিডিয়ায়।  এ দেশে এ সব ওপেন সিকরেট। তারপরও এমন ঘটনা যে কেন ঘটে! আসলে ঘুষ জিনিসটা দিয়ে-থুয়ে খাওয়াই ভাল। তা করলে গাড়িচালক আজমকে হজম করা কঠিন হতো না কিছু। রাজনীতি অত্যন্ত ব্যয়বহুল এখন। নেতা হতে, মন্ত্রী-এমপি হতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয় মানে কাঠখরচ করতে হয়। দলের সদস্য হওয়া, তারপর পদ পাওয়া, নির্বাচনে মনোনয়ন জোটানো, জিতে এমপি হওয়া, মন্ত্রীত্ব বাগানো ? এগুলো সহজ কম্ম নয়। কোটি-কোটি-কোটি কাঠখরচ। সেগুলো আসে কোত্থেকে? আসবে কোত্থেকে? রাজনীতিতে টাকা তো এভাবেই আসে। আর কোনও ভাবে আসে নাকি?

sazzadqadir@rediffmail.com

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন