‘অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে / তব ঘৃণা তারে যেন তৃণসম দহে’ - রবীন্দ্রনাথের ‘নৈবেদ্য’ (১৯০১) কাব্যগ্রন্থের ৭০ সংখ্যক কবিতার এই দু’টি পঙ্ক্তি সম্ভবত সর্বাধিক উল্লিখিত বাংলা কবিতাংশগুলোর একটি। এ কথারই প্রতিধ্বনি মেলে আরেকটি উদ্ধৃতিতে - ‘অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ন্যায়সংগত’। গত শতকের ষাটের দশকে একটি রাজনৈতিক সংগঠনের স্লোগান ছিল এ উদ্ধৃতিটি। তখন পোসটারে, ব্যানারে, দেয়াল লিখনে দেখা যেতো এ বিদ্রোহের আহবান। শুনেছিলাম উদ্ধৃতিটি চীনের কমিউনিস্ট নেতা মাও চ্যতোং (১৮৯৩-১৯৭৬)-এর। আরেকটি বিখ্যাত উদ্ধৃতি মারকিন প্রেসিডেন্ট টমাস জেফারসন (১৭৪৩-১৮২৬)-এর - “If a law is unjust, a man is not only right to disobey it, he is obligated to do so.”
গত ৯ই এপ্রিল রাতে পিলখানায় ৭০ লাখ টাকা নিয়ে যে ঘনঘোর নাটকের অবতারণা হয় তাতে এ সব উদ্ধৃতি মনে পড়ছিল বারবার। উদ্ভূত নাটকীয় ঘটনাই প্রমাণ করে ওই টাকার সঙ্গে জড়িয়ে আছে অনেক অন্যায়। সে প্রমাণ পেয়েই অনুসন্ধানে নামে মিডিয়া। আর খুব দ্রুত বেরিয়ে পড়ে থলের কালো বিড়াল। দেখা যায় ‘রেলগাড়ি ঝমাঝম... পা পিছলে আলুর দম’ গোছের এক কাহিনী। রেলের ট্রেড অ্যাপ্রেনটিস পদে ১৬ কোটি টাকার নিয়োগ বাণিজ্যের এক অংশ ওই ৭০ লাখ টাকা। সে অন্যায়ে বহু পক্ষ জড়িত। নিয়োগদাতা, নিয়োগপ্রার্থী, তদবিরকারী, নিয়োগপ্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ছাড়াও আছেন তাঁরা - যাঁদের না দিয়েথুয়ে বড় দাঁও মেরে ভূরিভোজ করা যায় না।
রেল নতুন মন্ত্রণালয়। তাই বলে দুর্নীতির ব্যাপারস্যাপার নতুন নয় এখানে। এ মন্ত্রণালয় আগে ছিল যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অংশ। তখন দুর্নীতি সংক্রান্ত ঘাপলা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পর্যন্ত জানাজানি হওয়ায় পদ্মা সেতুর নির্মাণ হয়ে যায় অনিশ্চিত। এর আগে সড়ক নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণের ব্যাপার নিয়ে ঘটে নানা তুলকালাম। এক দুর্ঘটনায় দু’জন খ্যাতিমান ব্যক্তির প্রাণহানির সূত্রে মিডিয়ায় আসে তাদের সে সব কর্মকা-ের ফিরিস্তি। তবে এসব কি কেবল রেলে বা যোগাযোগে চলছে? অন্যান্য মন্ত্রণালয়ে এদিক-সেদিক কিছু নেই?
উপন্যাসের পাঠকরা বা টিভি-নাটকের দর্শকরা জানেন, এখন সবচেয়ে ভাল ফরমুলা হচ্ছে - অস্বাভাবিক লোকজনদের নিয়ে উপন্যাস-নাটক লেখা। নায়ক-নায়িকা, মা-বাবা থেকে কাজের লোক বা বুয়া সবাই কথাবার্তা বলবে অদ্ভুত-অদ্ভুত, কাজকর্ম করবে আরও অদ্ভুত-অদ্ভুত অর্থাৎ উপন্যাস বা নাটকের সকল চরিত্রকে চলনে বলনে হতে হবে পাগলা বা পাগলাটে। তাহলেই উপন্যাস হট কেক, টিভি নাটক সুপার হিট। এ রকম হট বা হিট করার ফরমুলা আগেও ছিল। শরৎচন্দ্রের উপন্যাস যাঁরা পড়েছেন তাঁরা জানেন - ‘পল্লীসমাজ’-এ সবাই খারাপ, কেবল ‘রমা’ ও ‘রমেশ’ ভাল। কথাটির অর্থ, উপন্যাসে শরৎচন্দ্র সমাজের শতেক দোষ-ত্রুটি দেখালেও নায়ক ও নায়িকাকে রাখতেন প্রায় দেবোপম নিষ্কলঙ্ক। বাস্তবে এমন তো হতে পারে না। কোনও সমাজে মাত্র দু’জন ভাল লোক থাকতে পারে না, যদি ৯৮ জন মানুষ খারাপ হয়। সে রকম কেবল রেল-যোগাযোগ খারাপ আর বাকি সকল মন্ত্রণালয় ভাল - এমন হতে পারে কি? কিন্তু সবার উপরে রাজনীতি। তাই বলছি, সকল শত্তুরের মুখে ছাই দিয়ে ৭০ লাখ হতে পারে সাদা বিড়াল। সে ম্যাঁও শোনা গেছে এরই মধ্যে। আমার প্রিয় কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় সেই কবে লিখেছেন - “রূপসী তুই রাজনীতি, দিস্ ছেলে-ছোকরাদের মাথা ঘুরিয়ে; কিন্তু বুড়ো শয়তানদের সঙ্গে থাকিস্ রাত্রে শুয়ে।” তাহলে এই নোংরা রাজনীতি ঠেকাবার উপায় কি? একটাই উপায়। বাঁচার রাজনীতি।
sazzadqadir@yahoo.com
গত ৯ই এপ্রিল রাতে পিলখানায় ৭০ লাখ টাকা নিয়ে যে ঘনঘোর নাটকের অবতারণা হয় তাতে এ সব উদ্ধৃতি মনে পড়ছিল বারবার। উদ্ভূত নাটকীয় ঘটনাই প্রমাণ করে ওই টাকার সঙ্গে জড়িয়ে আছে অনেক অন্যায়। সে প্রমাণ পেয়েই অনুসন্ধানে নামে মিডিয়া। আর খুব দ্রুত বেরিয়ে পড়ে থলের কালো বিড়াল। দেখা যায় ‘রেলগাড়ি ঝমাঝম... পা পিছলে আলুর দম’ গোছের এক কাহিনী। রেলের ট্রেড অ্যাপ্রেনটিস পদে ১৬ কোটি টাকার নিয়োগ বাণিজ্যের এক অংশ ওই ৭০ লাখ টাকা। সে অন্যায়ে বহু পক্ষ জড়িত। নিয়োগদাতা, নিয়োগপ্রার্থী, তদবিরকারী, নিয়োগপ্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ছাড়াও আছেন তাঁরা - যাঁদের না দিয়েথুয়ে বড় দাঁও মেরে ভূরিভোজ করা যায় না।
রেল নতুন মন্ত্রণালয়। তাই বলে দুর্নীতির ব্যাপারস্যাপার নতুন নয় এখানে। এ মন্ত্রণালয় আগে ছিল যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অংশ। তখন দুর্নীতি সংক্রান্ত ঘাপলা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পর্যন্ত জানাজানি হওয়ায় পদ্মা সেতুর নির্মাণ হয়ে যায় অনিশ্চিত। এর আগে সড়ক নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণের ব্যাপার নিয়ে ঘটে নানা তুলকালাম। এক দুর্ঘটনায় দু’জন খ্যাতিমান ব্যক্তির প্রাণহানির সূত্রে মিডিয়ায় আসে তাদের সে সব কর্মকা-ের ফিরিস্তি। তবে এসব কি কেবল রেলে বা যোগাযোগে চলছে? অন্যান্য মন্ত্রণালয়ে এদিক-সেদিক কিছু নেই?
উপন্যাসের পাঠকরা বা টিভি-নাটকের দর্শকরা জানেন, এখন সবচেয়ে ভাল ফরমুলা হচ্ছে - অস্বাভাবিক লোকজনদের নিয়ে উপন্যাস-নাটক লেখা। নায়ক-নায়িকা, মা-বাবা থেকে কাজের লোক বা বুয়া সবাই কথাবার্তা বলবে অদ্ভুত-অদ্ভুত, কাজকর্ম করবে আরও অদ্ভুত-অদ্ভুত অর্থাৎ উপন্যাস বা নাটকের সকল চরিত্রকে চলনে বলনে হতে হবে পাগলা বা পাগলাটে। তাহলেই উপন্যাস হট কেক, টিভি নাটক সুপার হিট। এ রকম হট বা হিট করার ফরমুলা আগেও ছিল। শরৎচন্দ্রের উপন্যাস যাঁরা পড়েছেন তাঁরা জানেন - ‘পল্লীসমাজ’-এ সবাই খারাপ, কেবল ‘রমা’ ও ‘রমেশ’ ভাল। কথাটির অর্থ, উপন্যাসে শরৎচন্দ্র সমাজের শতেক দোষ-ত্রুটি দেখালেও নায়ক ও নায়িকাকে রাখতেন প্রায় দেবোপম নিষ্কলঙ্ক। বাস্তবে এমন তো হতে পারে না। কোনও সমাজে মাত্র দু’জন ভাল লোক থাকতে পারে না, যদি ৯৮ জন মানুষ খারাপ হয়। সে রকম কেবল রেল-যোগাযোগ খারাপ আর বাকি সকল মন্ত্রণালয় ভাল - এমন হতে পারে কি? কিন্তু সবার উপরে রাজনীতি। তাই বলছি, সকল শত্তুরের মুখে ছাই দিয়ে ৭০ লাখ হতে পারে সাদা বিড়াল। সে ম্যাঁও শোনা গেছে এরই মধ্যে। আমার প্রিয় কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় সেই কবে লিখেছেন - “রূপসী তুই রাজনীতি, দিস্ ছেলে-ছোকরাদের মাথা ঘুরিয়ে; কিন্তু বুড়ো শয়তানদের সঙ্গে থাকিস্ রাত্রে শুয়ে।” তাহলে এই নোংরা রাজনীতি ঠেকাবার উপায় কি? একটাই উপায়। বাঁচার রাজনীতি।
sazzadqadir@yahoo.com
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন