বৃহস্পতিবার, ১৫ মার্চ, ২০১২

একটি আদর্শ মহাসমাবেশ

রাজনীতিকরা নানা অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী। রাজনীতির ভাষণ থেকে তা বোঝা যায় সহজেই। যে জনসভা অনুষ্ঠিত হয়নি তার আয়োজন করেই তারা আগে থেকে প্রচার করতে থাকেন ‘বিশাল জনসভা’ বা ‘ঐতিহাসিক জনসভা’। সেই ছোটবেলা থেকে এখনও আমি অবাক হয়ে ভাবি, কি করে এমন আগাম ঘোষণা দিতে পারেন তারা! কি করে সব কিছু জানতে পারেন আগেভাগে! একই ভাবে ‘সমাবেশ’ যে ‘মহাসমাবেশ’ হবে তা-ও অগোচরে থাকে না তাদের। এ নিয়ে জোরেশোরে প্রচার-প্রচারনা চলে আয়োজনের পরিকল্পনার সময় থেকেই। মুশকিল হলো আর কোন ব্যাপারেই তাদের আগাম ঘোষণা বাস্তবায়ন হয় না কখনও। তখন ‘পরিকল্পনা’র ‘পরি’ উড়ে যায়, কেবল ‘কল্পনা’টুকু থাকে। যাহোক, সামপ্রতিক দু’টি মহাসমাবেশ সূত্রেই এত সব ভনিতা। দু’টি জোট, একটি মহাজোট, আয়োজন করেছিল এই মহাসমাবেশ দু’টির। আমার ভাল লেগেছে দ্বিতীয়টি। এর আয়োজন-অনুষ্ঠান হয়েছে আমার মনমতো। দু’টি মহাসমাবেশের গালাগালি, রাগারাগি, হুমকি-ধমকিও উপভোগ করেছি বেশ। বুঝেছি তাদের আর অন্য কিছু বলার নেই। বলা শেষ, মানে কম্মও শেষ। দেশবাসীর জন্য এরচেয়ে বাঁচোয়া আর কি আছে!
তবে দ্বিতীয় মহাসমাবেশটি কেন এত ভাল হয়েছে তা বলি এখন। এর অনুষ্ঠান-আয়োজনে কোন সমস্যা হয়নি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত। সমাবেশে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি মিলেছে কোন টালবাহানা ছাড়াই। এ জন্য ধরাধরি দৌড়ঝাঁপ করতে হয়নি। তাছাড়া এ মহাসমাবেশ নিয়ে আইন-শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বাহিনীর উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা, রিপোর্ট লেখা, তৎপরতা? এসব কিছুই ছিল না। সপ্তাহ খানেক আগে থেকে দেশব্যাপী ধরপাকড় চালাতে হয়নি। আরও অনেক শান্তিতে ছিলেন তারা। পুলিশ, গোয়েন্দা, আনসার, ভিডিপি, র‌্যাব, বিজিবি- কারও পথে পথে টহল দিতে হয়নি, চেকপোস্ট বসাতে হয়নি। রাজধানীর ভবনগুলোর ছাদের উপরে উপরে, মহাসড়কের পয়েন্টে পয়েন্টে, নৌপথের ঘাটে ঘাটে ব্যতিব্যস্ত থাকতে হয়নি। মহাসমাবেশের যাত্রীদের ঠেকাতে হয়নি, গ্রেপ্তার বা আটক করতে হয়নি। বড় কথা তাদের কোন গ্রেপ্তার বাণিজ্য করে দুর্নাম কিনতে হয়নি। ফলে বাস, ট্রাক, ট্রেন, টেম্পো, ভ্যান, ক্যাব, বেবিট্যাঙি, মাইক্রোবাস, রিকশা চলেছে রাস্তায়। লঞ্চ-ট্রলারও ভিড়তে পেরেছে ঘাটে ঘাটে। তাই গাড়ি-বাড়ি তল্লাশি করে নিরীহ লোকজনকে হেনস্তা হয়রানি নিগ্রহ করার ঝামেলায় পড়তে হয়নি আইন-শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বাহিনীকে। চিড়া-মুড়ি কেনার জন্য কাউকে জেলে ঢোকাতে হয়নি। হোটেল, রেস্তরাঁ, বেকারি বন্ধ করে মানুষের থাকা-খাওয়ার মৌলিক অধিকার লঙ্ঘনের দায় নিতে হয়নি ঘাড়ে। বলা যাবে না, চলা যাবে না, খাওয়া যাবে না, থাকা যাবে না? এমন একটি নাগরিক অধিকার লঙ্ঘনের পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে হয়নি। নাশকতার আশঙ্কার নামে দেশকে অধিকৃত দেশের মতো করে তুলতে হয়নি। এই তো গেল নিরাপত্তার দিকটি। রাজনৈতিক দিক থেকেও আমার মনমতো হয়েছে দ্বিতীয় মহাসমাবেশটি। এ কাজে দলের ছাত্র-যুব-শ্রমিক-স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্মী-ক্যাডারদের চাঁদাবাজি ছাড়া আর তেমন কোন কাজে নামতে হয়নি। রড-লাঠি-স্টিক হাতে রাস্তার মোড়ে মোড়ে অবস্থান নিয়ে মহাসমাবেশের নিরস্ত্র যাত্রীদের দেখামাত্র হামলে পড়তে হয়নি। ঘাটে কোন লঞ্চ ভিড়া মাত্র লাঠি হাতে ঝাঁপিয়ে পড়তে হয়নি। আনসার-পুলিশদেরও গ্রেপ্তার বা আটকের ঝামেলা করতে হয়নি। তবে সবচেয়ে ভাল লেগেছে মহাসমাবেশের যাত্রীদের। তারা দলে দলে মিছিল নিয়ে যোগ দিয়েছেন মহাসমাবেশে। হাতে লগি-বৈঠা, লাঠি-ডান্ডা থাকলেও তাদের আটক বা গ্রেপ্তার হতে হয়নি। পথে পথে পিটুনি খেয়ে রক্তাক্ত জখম হতে হয়নি, প্রাণ বাঁচাতে ছুটে মরতে হয়নি পথে-ঘাটে অলিতে গলিতে।
সত্যিই সর্বাঙ্গসুন্দর হয়েছে দ্বিতীয় মহাসমাবেশ। দেশের প্রতিটি জনসভা-সমাবেশ যেন এমনই হয়?এ কামনাই করি। এমন একটি আদর্শ মহাসমাবেশের জন্য আয়োজকদের ধন্যবাদ জানাই। আপনাদের জয় হোক। গণতন্ত্র দীর্ঘজীবী হোক।


sazzadqadir@gmail.com

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন