বৃহস্পতিবার, ১৫ মার্চ, ২০১২

একটি গায়েবি রিপোর্ট এবং...

কথা বলতে না দিতে চেয়ে, সারা দেশে পথ চলতে বাধা দিয়ে, সরকার সৃষ্টি করেছে এক নজিরবিহীন ইতিহাস। বাস, ট্রাক, ট্রেন, লঞ্চ, ট্যাক্সি, টেম্পো, বেবিট্যাক্সি, ভ্যান, রিকশা- সব যানবাহনের গতিরোধ করে দেখিয়েছে ক্ষমতার যথেচ্ছ প্রয়োগ। ১২ই মার্চ বিরোধী দলের মহাসমাবেশকে নস্যাৎ করতে হোটেল, রেস্তরাঁ, বেকারি বন্ধ করে অন্ন ও বাসস্থানের মৌলিক মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে নির্দ্বিধায়। পোস্টার, ব্যানার, মাইকিং- বেতারে-টিভিতে সমপ্রচার- সব কিছুকে বন্ধ, নিষিদ্ধ করে বাক্‌স্বাধীনতাকে রুদ্ধ, গণতন্ত্রের কণ্ঠকে স্তব্ধ করে দেশকে এক অঘোষিত জরুরি অবস্থার পরিস্থিতিতে নিয়ে গেছে। গায়েবি রিপোর্ট নাকি ছিল ২০ লাখ লোক ঢাকায় জমায়েত হবে। তিন দিন তারা থাকবে খালেদার নির্দেশে। এতে সরকারের পতন হয়তো হবে না। কিন্তু তিন দিন যদি ঢাকায় ২০ লাখ লোক থাকে তখন কি হবে? দুনিয়ায় বর্তমান সরকার সম্পর্কে কি বার্তা যাবে? এ কারণে নাকি নীতিনির্ধারকরা স্থির করেন লোক সমাগম যে করেই হোক বন্ধ করতে হবে। এই ‘কর্তব্য’ পালন করতে গিয়ে দেশব্যাপী এমন ব্যাপক দলন দমন স্মরণ করিয়ে দিয়েছে ঘোরতর কোন যুদ্ধাবস্থাকে। তবুও মহাসমাবেশে যোগ দিয়েছে মানুষ। লাখ-লাখ মানুষ। পথে-পথে হামলা হেনস্তার শিকার হয়ে, জখম রক্তাক্ত হয়ে, ক্লান্ত শ্রান্ত অবসন্ন ক্ষুধার্ত অবস্থায় তারা এসেছে রাজধানীতে। পুলিশ ও যুবলীগ-ছাত্রলীগের মারমুখো তাড়না, অত্যাচার, নির্যাতন, লাঞ্ছনা ঠেকিয়ে রাখতে পারে নি তাদের। যানবাহন থেকে পিটিয়ে নামিয়ে দেয়া হয়েছে, তারা রওনা হয়েছে পায়ে হেঁটে। হাঁটা পথেও ছাত্রলীগ-যুবলীগ রড-লাঠি-স্টিক হাতে হামলে পড়েছে তাদের ওপর, পুলিশ বন্ধ করে দিয়েছে পথ। লঞ্চ বন্ধ, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তারা এসেছে নৌকায়। বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে এসেছে উপকূলীয় এলাকার মানুষ। ঢাকার অদূরে নেমে অলিগলি পথ ধরে তারা এসেছে মহাসমাবেশে। যা খুশি অজুহাত দেখিয়ে গ্রেপ্তার-আটক করা হয়েছে বহু মানুষকে, চিড়া-মুড়ি কেনার দায়েও জেলে যেতে হয়েছে অনেককে। সরকার সবই করেছে নিরাপত্তার নামে সতর্কতার কথা বলে, রাজনীতির নামে প্রতিপক্ষকে মোকাবেলার যুক্তি দেখিয়ে- কিন্তু কারও কারও ইচ্ছা-খুশি কি ছাপিয়ে ওঠেনি সব কিছুকে? ‘খবর’ দেখাতে রাষ্ট্রীয় কোষাগারের কত অর্থ এ নিয়ে ব্যয় হলো সে হিসাব কে দেবে?

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন